ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

আমার বন্ধু আতিকউল্লাহ খান মাসুদ নয়নসমুখে তুমি নাই

​​​​​​​মনোজ সেনগুপ্ত

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২১ মার্চ ২০২৫

আমার বন্ধু আতিকউল্লাহ খান মাসুদ  নয়নসমুখে তুমি নাই

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সবচেয়ে বড় কাজদৈনিক জনকণ্ঠ প্রথম অফিস ছিল মতিঝিলে। পরে স্থানান্তরিত হয় ১৯৯৬ সালে ইস্কাটনে। আধুনিক প্রযুক্তিতে ভিন্ন আঙ্গিকে দেশের পাঁচ বিভাগীয় শহর

থেকে একযোগে চার রঙা একটি সংবাদপত্র প্রকাশের প্রতিভূ পুরুষ, অগ্রসেনানি। তিনিই এই দৈনিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক

মাসুদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ১৯৬৭ সাল থেকে। আমরা এক সঙ্গে জগন্নাথ কলেজে পড়েছি এক বেঞ্চে বসতাম। ক্যান্টিনে এক সঙ্গে খেতাম, বেশির ভাগ দিন খাবারের বিল মাসুদই দিত। তখন জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি চৌদ্দ হাজার ছাত্রের প্রিয় কলেজ জগন্নাথ কলেজ। যার অধ্যক্ষ ছিলেন সাঈদুর রহমান স্যার, বজলুর রহমান স্যার, হাবিবুর রহমান স্যার প্রমুখ। শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন শ্রদ্ধেয় অজিত গুহ, আবদুল মতিন, শওকত আলী, রাহাত খান, আখতারুজজামান ইলিয়াস, . মুহিবুল্লাহ, এম , ইদ্রিস, আশরাফ আলী, এম রেজা, . মেহের খোদা, . রাসবিহারী ঘোষ প্রমুখ। এসব গুণী মানুষ আমাদের শিক্ষক ছিলেন। মাসুদ শিক্ষকদের মাঝে খুব প্রিয় ছিলেন। এই কলেজের ছাত্র ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সাইফুদ্দিন আহমেদ, সুধীর হাজরা, . হামিদ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, এম রেজা, শামসুল আলম হাসু, হাজী মকবুল আরও অনেকে।

তখন রাজনৈতিক আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল জগন্নাথ কলেজ।৬৬ আন্দোলন৬৯-এর আন্দোলন সব আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জগন্নাথ কলেজ। একসঙ্গে রাজপথে নেমেছি, মিছিল নিয়ে কুর্মিটোলা গিয়েছি। প্রভাত ফেরিতে শহীদ মিনারে গিয়েছি। সব কিছুর অগ্রভাগেই ছিল আতিকউল্লাহ খান মাসুদ।

আমি তখন ওয়ারিতে থাকতাম। ওয়ারি ঢাকার খুব প্রসিদ্ধ এলাকা ছিল। পাশেই থাকতো মাসুদ আর ওর খালাত ভাই কুতুব উদ্দিন খান ঝিলু। প্রতিদিন বিকেলেই ওরা ওয়ারিতে আসত। আমরা সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিতাম, গল্পগুজব করতাম, সাহিত্য, রাজনীতি, খেলাধুলা, নাটক এসবই ছিল আমাদের আড্ডার মূল বিষয়। মাসুদ অভিনয় করতো না কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকত। সে ছিল আমাদের ওয়ারি যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক। আমরা তখন অনেক নাটক ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মঞ্চস্থ করেছিলাম। আমাদের সঙ্গে আরও ছিল বন্ধু মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সুলতান উদ্দিন আহমেদ রোজীশাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, সাধন, সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন বাবু, দেলোয়ার হোসেন দিলু, রফিকুল ইসলাম দুলাল, মাহমুদন্নবী, কুতুবউদ্দিন খান ঝিলু, মওলা ব্রাদার্সের জাহাঙ্গীর, বন্ধু মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন, সুধীর কুমার হাজরা, কামাল মজুমদার, কামাল উদ্দিন, আমাদের সভাপতি ছিলেন মরহুম আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সাহেবের ছেলে সামশুল আলম হাসু।

আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সবচেয়ে বড় কাজদৈনিক জনকণ্ঠ প্রথম অফিস ছিল মতিঝিলে। পরে স্থানান্তরিত হয় ১৯৯৬ সালে ইস্কাটনে। আধুনিক প্রযুক্তিতে ভিন্ন আঙ্গিকে দেশের পাঁচ বিভাগীয় শহর থেকে একযোগে চার রঙা একটি সংবাদপত্র প্রকাশের প্রতিভূ পুরুষ, অগ্রসেনানি।  এই দৈনিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

১৯৯৩ খ্রিঃ ২১ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে প্রকাশিত হয়জনকণ্ঠ তিনি সাহসী ছিল নিঃসন্দেহে। আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন ছিল। তাই তিনি পত্রিকা জগতে নবজাগরণের সৃষ্টি করতে পেরেছিল

মাসুদ ছিল অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ক। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। মুক্ত সংবাদ প্রকাশের নির্ভীক সৈনিক, সংবাদপত্র জগতে অবিস্মরণীয় নাম, দেশ গড়ার কারিগর। সর্বোপরি আমি গর্ববোধ করি আতিকউল্লাহ খান মাসুদ আমার বন্ধু ছিল।

২৯ জানুয়ারি-২১ আমি হারাই আমার প্রিয়তমা স্ত্রী নন্দিতা সরকারকে, তিনি ৮৫ ব্যাচের বিসিএস প্রশাসন কর্মকর্তা ছিলেন। করোনায় মৃত্যুবরণ করেন। আর প্রিয় বন্ধু মাসুদকে হারাই ২২ মার্চ-২০২১।

তোমার বেঁচে থাকার আরও প্রয়োজন ছিল বন্ধু। তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো বন্ধু। কবিগুরুর ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে-

নয়নসমুখে তুমি নাই

নয়নের মাঝখানে নিয়ে যে ঠাঁই

লেখক: অভিনেতা নাট্য নির্দেশক (আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সহপাটি এবং বন্ধু)

×