
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বের নানা দেশে ধর্মের অনুসরণ কিংবা বিশ্বাসের উপর বিভিন্ন ধারণা ও অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তবে কিছু দেশ রয়েছে যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি প্রবল আগ্রহ নেই, বরং সেখানে জনগণের অধিকাংশই নাস্তিক। এমনই একটি দেশ হলো চীন, যেখানে ধর্মীয় পরিচয় প্রায় শূন্যের কোটায় পৌঁছেছে। যদিও চীনের সরকার ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তবে দেশের জনগণের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের অভাব একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এই ফিচার নিউজে আমরা চীনের নাস্তিকতা, এর ইতিহাস, এবং বিশ্বের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করবো।
চীনে ধর্মীয় বিশ্বাসের সংকট
চীনের সমাজে ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে দীর্ঘ সময় ধরে অস্বীকৃতি ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতায় আসার পর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব (১৯৬৬-১৯৭৬) সময়কালে ধর্মীয় স্থান, প্রার্থনালয় ও মন্দিরগুলোর উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং ধর্মীয় কর্মসূচিগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এর পরেও, চীনের নাগরিকদের মধ্যে ধর্মের প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কম ছিল। আধুনিক চীনে প্রায় ৫৭% জনসংখ্যা ধর্মবিশ্বাসী নয়, আর বাকি ৪৩% ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহী হলেও তারা বিশেষ কোনো ধর্মকে অনুসরণ করে না।
চীনের নাস্তিকতার মূল কারণ
চীনে নাস্তিকতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, চীনের কমিউনিস্ট সরকারের আদর্শগুলো ধর্মকে সাধারণত মানব সমাজের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে দেখতে থাকে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং বিজ্ঞান ও যুক্তির উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়, যা মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তৃতীয়ত, চীনে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির বিস্তার অনেকের ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে মোড় পরিবর্তন করেছে।
বিশ্বে ধর্মীয় অবস্থা
যদিও চীন বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাস্তিক দেশ হিসেবে পরিচিত, তবে অন্যান্য দেশগুলোতেও ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি মনোভাব ভিন্ন। যেমন, ইউরোপের কিছু দেশে (বিশেষত স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো) ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আগ্রহ কম, তবে ইসলামিক দেশগুলোতে ধর্মীয় বিশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাস্তিক দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান এক অর্থে মানবসভ্যতার ধর্মীয় পরিচয়ের পরিবর্তনের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। এটি একটি উদাহরণ যে, কিভাবে রাষ্ট্রের নীতি ও সমাজের প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি মানুষের মনোভাব পরিবর্তিত হতে পারে।
নুসরাত