
.
মাঠের একপ্রান্ত থেকে মনে হবে দিগন্তের পানে যেন চেয়ে আছে সারিবদ্ধ হলদে সূর্যমুখী ফুল। নেতিয়ে পড়া ফুলগুলো দুপুরে সূর্যের তপ্ত গরমে পরম ভালোবাসা মেখে যেন শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ এক অপরূপ দৃশ্য। ফাগুনের প্রখর রোদে বাতাসে দোল খাচ্ছে মনকাড়া সূর্যমুখী। ক্ষণে ক্ষণে পাখি আর কীটপতঙ্গের দল এসে সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। পাবনা জেলার চাটমোহরের মথুরাপুর মাঠে হরহামেশাই দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। কয়েকজন চাষির যত্নে বেড়ে উঠেছে প্রতিটি সূর্যমুখী গাছ। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া এই ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় ফলনও বেশ ভালো।
ফুল বাগানের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীদের দুই চোখ ভরে দেখেন নয়নাভিরাম সূর্যমুখী ফুলের বাগান। তাদের কথাÑ পবিত্র রমজানে রোজা রেখে এত সুন্দর ফুলের দৃশ্য মনটা ভরিয়ে দেয়।
জানা গেল, চলতি বছর উপজেলায় মথুরাপুর, পার্শ্বডাঙ্গা, মুলগ্রাম ও ডিবিগ্রামে তেলবীজ হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন আটজন কৃষক।
মথুরাপুর গ্রামের ফুলচাষি সুমন পারভেজ বলেন, অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে জমিতে সেচ ও সারের খরচ কম লাগে। এতে রোগ-বালাই কম হয়। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় এই প্রথম সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছি। চলতি বছর এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে জমি চাষ, বীজ বপন, সেচ, অন্যান্য খরচ ও ফসল তোলা পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র ৯০ থেকে ১শ দিনেই ৭-৮ মণ বীজ পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও, ফুল গাছের ডাঁটা থেকে জ্বালানি (খড়ি) পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের তেল ৪শ থেকে ৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।
সুফল পাওয়া একই এলাকার শফিকুল জানান, গত বছরের মতো এবারও তিনি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। স্বল্প ব্যয়ে অধিক ফলন পাওয়ার আশা করছেন। লাভজনক, তাই আগামীতেও এই ফুলের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি অফিসার সাঈদুর রহমান সাঈদ জানান, সূর্যমুখী ফুল চাষে ফলন ভালো হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক লাভ। এ ছাড়া, রোগ-বালাই কম। এই ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মানের তেলবীজ পাওয়া যায়। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে তেলবীজ কৃষি প্রণোদনার আওতায় উপজেলার মথুরাপুরে ৫০ শতক জমিতে প্রদর্শনী হিসেবে কৃষককে সার, বীজ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া, অন্য এলাকায় কয়েকজন তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এই ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। আগামীতে আরও বৃদ্ধি হবে আশা করছি।