ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

এক জমিতে তিন ফসল

সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ১৫ মার্চ ২০২৫

এক জমিতে তিন ফসল

বাংলাদেশের চরাঞ্চল বরাবরই কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জপূর্ণ এলাকা। বেলে বা বেলে-দোঁআশ মাটি, পানি ধারণক্ষমতা কম, আকস্মিক বন্যা, খরা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবÍএসব কারণে চরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনশীলতা সবসময়ই কম ছিল। ফলে এখানকার কৃষকরা আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে ছিলেন। তবে সেই চিত্র বদলে দিতে কাজ করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর গুজিমারী এলাকায় তাঁরা একটি গবেষণা পরিচালনা করছেন, যেখানে এক জমিতে তিন ফসল চাষের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষণায় সাফল্য এসেছে, যা ভবিষ্যতে চরাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

নতুন সম্ভাবনার দ্বার
‘ফসলের উৎপাদনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষণ এবং জলবায়ু সহনশীল ফসল ব্যবস্থার অভিযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের চরাঞ্চলের ফসলের উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন’Ñ এই প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ খায়রুল হাসানের নেতৃত্বে এ গবেষণায় কাজ করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও বাকৃবির পিএইচডি গবেষক পরেশ চন্দ্র দাস এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইকরামুল হক।
গবেষণার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চরাঞ্চলে উপযোগী ফসল ও চাষপদ্ধতি বের করা, জলবায়ু সহনশীল ও লাভজনক শস্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, খরার প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন, জলবায়ু-স্মার্ট উৎপাদন পদ্ধতি প্রবর্তন। গবেষকরা জানিয়েছেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত সুনির্দিষ্ট শস্যবিন্যাস অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে ভুট্টা, মরিচ, ধনিয়া, পাট, আলু, রসুন, ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। ফলে উৎপাদনশীলতা কম হয় এবং আকস্মিক বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
গবেষণার আওতায় তিনটি লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে: ভুট্টা, পাট, রোপা আমন, আলু, পাট, মরিচ, চিনাবাদাম, রোপা আমন। এই শস্যবিন্যাস পদ্ধতি অনুসরণ করে আধুনিক জাত, উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতি চিহ্নিত করে চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য সুপারিশ করা হবে।

কৌশল ও প্রযুক্তির প্রয়োগ
গবেষণায় দেখা গেছে, আকস্মিক বন্যা মোকাবিলায় জলমগ্ন সহনশীল বিনাধান-১১ এবং কম বয়সী চারা ভালো ফলন দিয়েছে। এছাড়া, ভুট্টা ও মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল (সাথী ফসল) হিসেবে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, কালোজিরা, মেথি, ধনিয়া ও মটরশুঁটি চাষ করে একক ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন: মালচিং ও ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহারে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটের বীজ প্রাইমিংয়ে অঙ্কুরোদগমের হার বৃদ্ধি, আগাছানাশক ও হ্যান্ড উইডিংয়ের সমন্বিত ব্যবহারে ভালো ফলন, বারি সরিষা-১৪, রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গম, রসুন, কাউন ও সূর্যমুখীর উৎপাদনে আশাব্যঞ্জক ফলাফল।

×