ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানে রাজধানীবাসীর অসহনীয় দুর্ভোগ

যানজটে আটকা পড়ে সড়কেই ইফতার করতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের

ফজলুর রহমান

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১৩ মার্চ ২০২৫

যানজটে আটকা পড়ে সড়কেই ইফতার করতে হচ্ছে চাকরিজীবীদের

.

অফিস শেষে রাস্তায় বের হতেই ডানে-বামে গাড়ি সামনে-পিছনেও গাড়ি। যাত্রীবাহী বাস, রিক্সা, অটোরিক্সা, পিকআপ ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়িতে চতুর্দিক ঠাঁসা। দুই মিনিট চলে তো, দশ মিনিট আটকে থাকে জ্যামে। এর মধ্যেই যানবাহনের ইঞ্জিনের তাপ, হর্নের শব্দে চরম বিব্রতকর অবস্থা। আবার ইফতারের আগে ইফতারি নিয়ে বাসায় ফেরার চিন্তা। কিন্তু সড়কের বেড়াজাল থেকে যেখানে বের হওয়া দায়, সেখানে ইফতারের আগে আবার বাসায় ফেরা দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এভাবেই কেউ মাঝ পথে, কেউ বাসার কাছাকাছি পৌঁছাতেই কানে ভেসে আসে মাগরিবের আজান। উপায়ন্তুর না পেয়ে সড়কেই পানি বা হালকা খাবার দিয়ে ইফতার করেন নগরীর লাখ লাখ চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে প্রতিনিয়ত এমন অসহনীয় যানজটে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ থেকে যেন মোটেও প্রতিকারের উপায় নেই।  ইফতারের আগ মুহূর্তে যানজটের এমন সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের কোনো মন্তব্যই পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, একই সময়ে সড়কে গাড়ির চাপ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিনে এর মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ঈদ কেনাকাটার ভিড় যত বাড়বে, যানজটও তত বৃদ্ধি পাবে। যানজট থেকে নিস্তার যেন নগরবাসীর কপালে জুটছে না।   
বলা চলে রাজধানীতে বারো মাসই যানজট হচ্ছে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও যানজট দেখা যায়। তবু অফিস শেষে বাসায় ফিরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারেন নগরবাসী। কিন্তু রমজানে ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল থাকে যে, নগরবাসীকে রাস্তায়ই ইফতার করতে হচ্ছে। পবিত্র রমজানের বিকেলে রাজধানীতে অসহনীয় যানজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। অফিস শেষে ঘুরমুখো মানুষের চাপে প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কেই সময় কাটাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সড়কের এই যানজটের চাপ পড়ে মেট্রোরেলেও। বিকেলে মেট্রোতেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা। লাইনে দাঁড়িয়ে এক বা একাধিক ট্রেন যাওয়ার পর যাওয়ার সুযোগ  মেলে। পবিত্র রমজান মাসে সরকারি অফিসের নতুন সময় অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া বাকি পাঁচদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস চলে। সরকারি ছাড়াও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানও এই সময়সূচি অনুযায়ী অফিস করে। এতে বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকেই ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে শুরু করেন নগরের বাসিন্দারা। ইফতারের ১৫-২০ মিনিট আগ পর্যন্তও সড়কে তীব্র চাপ দেখা যায় পরিবহনের। এতে বিকেল সাড়ে ৩টার আগে থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা অসহনীয় যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী।

এই সময় সড়কের যানজট গিয়ে ঠেকে ফ্লাইওভারেও। রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজটের এই চিত্র দেখা  যায়। অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে গণপরিহনগুলোতেও যাত্রীদের চাপ থাকে অনেক। ইফতারের আগে বাদুরঝোলা হয়েও বাসায় ফিরতে হচ্ছে অনেককে। গুলিস্তান থেকে কাকলী আসা যাত্রী সুমন শেখ বলেন, গুলিস্তান জিপিওর সিগন্যাল পার হতে না হতেই আবার পল্টনে সিগন্যাল পড়ে। সেখান থেকে আবার মৎস্য ভবন, শাহবাগের সিগন্যালে পড়তে হয়। এই ২০ মিনিটের রাস্তায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। এর পর বড় সিগন্যাল বাংলামটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ অন্যান্য সিগন্যালে গাড়ি আটকা থাকে আরও বেশি সময়। এতে করে ইফতারের আগে অসহনীয় হয়ে উঠছে যানজট। নতুন বাজার থেকে বৌদ্ধমন্দির আসা লোকমান নামে বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, অফিস শেষ করে বিকেল ৪টায় বের হই। তখন থেকে রাস্তায় অনেক যানজট থাকে। বাসও খালি পাওয়া যায় না। কোনো রকম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। প্রতিটা সিগন্যালেই গাড়ি দাঁড়ায়। রোজা রেখে বাসে যানজট আর গরমের মধ্যে বসে থাকতে অসহ্য লাগে। 
সড়কের তীব্র যানজটের কারণে ইফতারের আগে অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটেও রওনা দেন গন্তব্যে। ইয়ামিন নামের এক পথচারী বলেন, কাওরানবাজার থেকে মগবাজার যাব। রাস্তায় প্রচুর যানজট। বাসের চেয়ে হেঁটে গেলেই কম সময় লাগবে। তাই হেঁটেই যাচ্ছি। কাওরান বাজারে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রোজায় আসরের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি থাকে। 

×