
ছবি: সংগৃহীত
জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশে প্রায় ১৩০ বছর আগে ঘোষণা করেছিলেন, 'ঈশ্বর মৃত' — যা আজও দর্শনের জগতে অন্যতম আলোচিত উক্তি। কিন্তু নীটশে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, এবং কেন এটি এখনো আমাদের মনে আলোড়ন তোলে।
নিটশের এই বক্তব্যের অর্থ ছিল না যে কোনো ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে মারা গেছেন, বরং পশ্চিমা বিশ্বে নৈতিকতা ও জীবনের মানে নির্ধারণে ঈশ্বরের ধারণার পতন ঘটেছে। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের বিকাশের ফলে, বিশেষ করে এনলাইটেনমেন্ট পরবর্তী সময়ে, মানুষ আর ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করে নৈতিকতা, মূল্যবোধ বা শৃঙ্খলার ব্যাখ্যা খুঁজছিল না। দ্য গে সায়েন্স এবং টোয়ালাইট অফ দ্য আইডলস গ্রন্থে নিটশে সতর্ক করেছিলেন যে ঈশ্বরের মৃত্যু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসব্যবস্থার পতন ঘটাবে এবং মানুষের জীবন অর্থহীনতার দিকে ধাবিত হতে পারে।
তবে এই বিশ্বাসের পতন ছিল একদিকে যেমন বিপজ্জনক, অন্যদিকে এটি সম্ভাবনার দুয়ারও খুলে দিয়েছে। নিটশে ভয় পেয়েছিলেন যে এই শূন্যতা মানুষকে নিহিলিজম বা চূড়ান্ত হতাশার দিকে ঠেলে দেবে। তবে তিনি এটিও মনে করতেন যে, এই সুযোগে মানুষ নিজস্ব মূল্যবোধ তৈরি করতে পারে। তাঁর 'উবামেনশ' (অতিমানব) ধারণাটি সেই বিরল ব্যক্তিদের প্রতিফলন, যারা ঈশ্বর বা সামাজিক বিধি-নিষেধের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের জীবনের অর্থ নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারে।
অন্যদিকে, নিটশে সতর্ক করেছিলেন 'লাস্ট ম্যান' সম্পর্কে — যারা আরামপ্রিয়, আত্মতৃপ্ত মানুষ, যারা ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও গভীরতর উদ্দেশ্য এড়িয়ে চলে। নিটশে আশঙ্কা করেছিলেন যে সমাজ সম্ভবত এই মধ্যম মানসিকতার জীবনকেই বেছে নেবে, পরিবর্তে আত্ম-উন্নয়নের পথে হাঁটার সাহস দেখাবে না।
আজ, ধর্মীয় প্রভাবের হ্রাস ও ধর্মনিরপেক্ষতার বৃদ্ধির সঙ্গে নিটশের এই ধারণাগুলি আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। তবুও, দার্শনিক অ্যালেইন দ্য বটন মনে করেন, আমরা নিটশের আশঙ্কার মতো একেবারে হতাশার দিকে না গিয়ে নিজেদের মধ্যে নৈতিক শৃঙ্খলা ও অর্থ বজায় রাখতে পেরেছি।
প্রশ্নটা এখনো রয়ে গেছে: আমরা কি সত্যিই নিজেদের জীবনের মানে ও মূল্যবোধ নিজেরা তৈরি করতে পারব, ঈশ্বর বা সামাজিক অনুশাসনের বাইরে দাঁড়িয়ে? যেমন অস্তিত্ববাদী দার্শনিক জ্যঁ-পল সার্ত্র বলেছিলেন, “লাইফ বিগিন্স অন দ্য আদার সাইড অব ডিসপ্যার” — হয়তো এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আমাদের জীবনের প্রকৃত অর্থ লুকিয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: https://bigthink.com/thinking/what-nietzsche-really-meant-by-god-is-dead/
আবীর