
ছবিঃ সংগৃহীত
পৃথিবীতে এমন অনেক প্রাণী আছে, যাদের অস্তিত্ব আমাদের বিস্মিত করে। তেমনই এক রহস্যময় প্রাণী অ্যান্টইটার, যা দিনে প্রায় ৩০,০০০ পিঁপড়ে খেয়ে ফেলে! পিঁপড়া শিকারে অতুলনীয় দক্ষতা অর্জন করা এই প্রাণী একদিকে যেমন নিরীহ, তেমনি বিপদের সময় হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর!
মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল
অ্যান্টইটার এমনভাবে চলে যে দূর থেকে মনে হতে পারে এটি দুই মুখবিশিষ্ট এবং তিন পায়ের প্রাণী! প্রকৃতপক্ষে, এর লম্বা নাক ও অনন্য শরীরের গঠনের কারণেই এমন বিভ্রম সৃষ্টি হয়।
শিকার করার দক্ষতা
অ্যান্টইটার পৃথিবীর অন্যতম দক্ষ পিঁপড়া ও উঁইপোকা শিকারী। এর জিহ্বা মানুষের হাতের চেয়েও লম্বা এবং এটি একসঙ্গে হাজার হাজার পিঁপড়ে শুষে নিতে পারে। দাঁত না থাকলেও, এই প্রাণী তার বিদ্যুতগতিতে নড়তে সক্ষম জিহ্বার সাহায্যে এক মিনিটে প্রায় ১৫০ বার খাবার সংগ্রহ করতে পারে।
রহস্যময় গঠন ও ভয়ঙ্কর থাবা
অ্যান্টইটার দেখতে একেবারেই ভিন্নধর্মী—
🔹 লম্বা থুতনি
🔹 পাকানো থাবা
🔹 লৌহমৎস্য দেহ
সব মিলিয়ে একেবারে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর মতো দেখতে। তবে, এদের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হলো তাদের বিশাল, তীক্ষ্ণ থাবা। এটি এতটাই শক্তিশালী যে, প্রয়োজনে জাগুয়ারের মতো ভয়ংকর শিকারীকেও প্রতিহত করতে পারে! যদিও অ্যান্টইটার স্বভাবে একেবারেই আক্রমণাত্মক নয়, তবুও বিপদের মুখে পড়লে এটি দুই পায়ে দাঁড়িয়ে ভয় দেখায় এবং প্রয়োজনে এক আঘাতেই প্রতিপক্ষকে মাটিতে ফেলে দিতে সক্ষম।
অ্যান্টইটারের বাচ্চা বহনের অদ্ভুত পদ্ধতি
অ্যান্টইটারদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো তাদের বাচ্চা বহনের পদ্ধতি। মা অ্যান্টইটার তার বাচ্চাকে পিঠের ওপরে চড়িয়ে রাখে, যা এতটাই নিখুঁতভাবে মিশে থাকে যে দূর থেকে আলাদা করাই কঠিন!
অ্যান্টইটারের বিচরণক্ষেত্র
এই বিস্ময়কর প্রাণী দক্ষিণ আমেরিকার ঘন অরণ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের জঙ্গলে। যদিও এরা গভীর অরণ্যের বাসিন্দা, তবে কখনো কখনো প্রশস্ত মাঠেও দেখা যায়। এরা দীর্ঘপথ হেঁটে খাবারের সন্ধান করে।
অদ্ভুত জীবনধারা—জলপান করে না!
অ্যান্টইটারদের জল পান করতে হয় না! তাদের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা তারা পিঁপড়ের শরীর থেকেই সংগ্রহ করে। এটি তাদের জীবনযাপনকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
বিপন্ন এই আশ্চর্যজনক প্রাণী
অ্যান্টইটার দেখতে যেমন রহস্যময়, তেমনি এদের জীবনযাপনও চমকপ্রদ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বন ধ্বংস ও শিকারীদের অত্যাচারের কারণে এই প্রাণী আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। হয়তো কিছুদিন পর এই অনন্য সুন্দর প্রাণী শুধুই গল্প হয়ে থাকবে!
প্রকৃতির এই বিস্ময়কর প্রাণীকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে, না হলে আমরা হারিয়ে ফেলব পৃথিবীর এক আশ্চর্য সৃষ্টি।
ইমরান