ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

যে দেশে রোজা রাখা নিষেধ

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১২ মার্চ ২০২৫

যে দেশে রোজা রাখা নিষেধ

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে, তবে কিছু দেশে ইসলাম ধর্মের চর্চা এবং বিশেষ করে রোজা রাখা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ। মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা একটি ধর্মীয় অনুশীলন হলেও কিছু দেশ সরকারিভাবে এই অনুশীলনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

চীন:
বিশ্বের অন্যতম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ, যেখানে উইঘুর মুসলিমদের বসবাস। কিন্তু সেখানে ইসলাম ধর্ম পালন করাই বিপজ্জনক। চীনা সরকারের কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য রোজা রাখা নিষিদ্ধ। কিছু এলাকায় দোকানদারদের দিনের বেলা খাবার বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়, যাতে রোজার প্রচলন কমে যায়। এমনকি পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি করে, কেউ রোজা রাখছে কিনা তা নিশ্চিত করতে।

চীনা সরকারের দাবি, এটি উগ্রপন্থা দমনের অংশ, কিন্তু বাস্তবে এটি ধর্মীয় স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ। উইঘুর মুসলিমদের মসজিদ ও পরিবারের কার্যক্রম নজরদারি করতে ক্যামেরা বসানো হয়েছে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের রোজা রাখতে না দেওয়ার জন্য ক্লাসে খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং শিক্ষকদের এই নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উত্তর কোরিয়া:
উত্তর কোরিয়ায় কিম জং উনের শাসনামলে ধর্মীয় নিপীড়ন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশটিতে ইসলামসহ যেকোনো ধর্মীয় বিশ্বাস শাসকের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকার জনগণের একমাত্র আনুগত্য কিম পরিবারের প্রতি রাখতে চায়।

উত্তর কোরিয়ার কঠোর নীতির কারণে কেউ যদি গোপনে রোজা রাখে বা কোরআন পড়ে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকি, ধরা পড়লে কারাগারে পাঠানো হয় বা মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে। ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৩,০০০। কঠোর শাসনের কারণে সেখানে মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা প্রায় অসম্ভব।

তাজিকিস্তান:
তাজিকিস্তান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও সরকার ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৭ সালের গৃহযুদ্ধের পর থেকে সরকার রাজনীতিতে ইসলামের ব্যবহারকে দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বিপদজনক মনে করে।

প্রেসিডেন্ট ইমাম রহমানের মতে, হিজাব এবং নিকাব দেশটির ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে না এবং এটি চরমপন্থার উত্থান ঘটাতে পারে। এজন্য স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী তরুণদের মসজিদে যাওয়া এবং রোজা রাখার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

রাশিয়া:
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার রোজা নিষিদ্ধ করেনি, কিছু অঞ্চলে মুসলমানদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। নিরাপত্তার নামে অনেক জায়গায় মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়, যার ফলে রোজা রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতেও বাধা সৃষ্টি হয়।

শিলা ইসলাম

×