
ছবিঃ সংগৃহীত
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী একসময় সাকার ফিশে ভরা ছিল। কিন্তু এখন এই নদী থেকে সাকার ফিশ প্রায় হারিয়ে গেছে। যেসব জেলে এই মাছ ধরতেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ফজলু মিয়া। দিনের পর দিন তিনি সবচেয়ে বেশি সাকার ফিশ ধরেছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, ফজলু মিয়া নৌকা বোঝাই করে সাকার ফিশ বিক্রি করছেন। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, "বিক্রি করতেছি, ২০ টাকা করে ছাড়তেছি, লোক মনে হয় দৌড়াইয়া আইতাছে!"
কেন সাকার ফিশ ধরেন ফজলু মিয়া?
নদীর মাঝে বসে ফজলু মিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয়। তিনি জানান, একসময় বুড়িগঙ্গায় প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত।
ফজলু মিয়া বলেন, "আগে যখন আমরা বুড়িগঙ্গায় মাছ ধরতাম, তখন শিং মাছ, মাগুর মাছ সহজেই পাওয়া যেত। একটা জাল ফেললেই ৫-১০ কেজি মাছ ধরা পড়ত। কিন্তু এখন দেশীয় মাছ তেমন ওঠে না, তাই আমি সাকার ফিশ ধরি।"
কোথা থেকে এলো সাকার ফিশ?
সাকার ফিশ সাধারণত অ্যাকুরিয়ামের কাঁচে জমে থাকা শ্যাওলা খেয়ে পরিষ্কার রাখে, তাই একুরিয়ামে এই মাছ রাখা হয়। ধারণা করা হয়, বিদেশ থেকে আনা এই মাছ কোনোভাবে বাংলাদেশের নদী-জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাকার ফিশের ইংরেজি নাম "Suckermouth Catfish" বা "Common Pleco"। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াটিক স্টাডিজ এর তথ্যমতে, এই মাছ দক্ষিণ আমেরিকার একটি প্রজাতি, যা এখন দক্ষিণ এশিয়ার জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের জলাধারে সাকার ফিশের আধিক্য বাড়ছে। এছাড়াও এটি উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে সাকার ফিশ নিষিদ্ধ
সাকার ফিশ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার সাকার ফিশের আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ, প্রদান, বাজারজাতকরণ এবং সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে।
যদিও বুড়িগঙ্গায় একসময় সাকার ফিশের আধিক্য ছিল, এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। ফজলু মিয়ার মতো অনেকেই এই মাছ ধরে ফেলার কারণে হয়তো নদী এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছে। তবে দেশীয় মাছের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখনও ভাবনার কারণ হয়ে আছে।
ইমরান