
ছবি: সংগৃহীত।
এই পৃথিবীতে অসংখ্য অগণিত মাখলুকাত বা আল্লাহর সৃষ্টি রয়েছে। এর মধ্যে বহু শক্তিশালী সৃষ্টি থাকলেও দুর্বল ও ক্ষুদ্র আকৃতির মানুষকে বলা হয়েছে "আশরাফুল মাখলুকাত" বা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আসমান ও জমিনে, জলে কিংবা স্থলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাখলুক আল্লাহর অসীম কুদরতের প্রমাণ। তবে মানুষের জানার বাইরেও রয়েছে অসংখ্য মাখলুক।
এদের মধ্যে কিছু সম্পর্কে আমরা জানি, তবে তাদের দেখতে পাই না—যেমন জিন জাতি। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জিন আগুনের শিখা থেকে তৈরি এক অদৃশ্য জাতি, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। তবে, তাই বলে কি তাদের অস্তিত্ব নেই?
কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন স্থানে জিনদের অস্তিত্ব, ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণীর লোক আছেন, যারা এদের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে চান না। তারা সবকিছু যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন এবং বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করতে চান। আজকের আলোচনায় আমরা কোরআনের আয়াত এবং আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়ে দেখাবো—জিন জাতির অস্তিত্ব সত্যিই আছে কি না।
জিন জাতি ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ আল-কোরআনে জিন জাতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন:
"আমি জিন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।"
(সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)
কোরআন নাযিল হবার আগেও জিন সংক্রান্ত বিশ্বাস আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল। মানুষের মতোই তাদেরও রয়েছে এক বিশেষ জীবনধারা, যা মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। তারা আমাদের মতোই আল্লাহর ইবাদত করে এবং তাদেরও রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন। তবে তাদের সৃষ্টি প্রক্রিয়া মানুষের তুলনায় ভিন্ন।
আল্লাহ বলেন:
"আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে এবং জিনকে সৃষ্টি করেছি আগুনের বিষাক্ত শিখা থেকে।"
(সূরা আর-রহমান: ১৫)
আরবি "জিন" শব্দের অর্থ হলো "গুপ্ত" বা "অদৃশ্য"।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে জিনদের অস্তিত্ব
বিজ্ঞানের আলোকে জিনদের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করার জন্য কিছু আধুনিক তত্ত্বকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
১. অ্যান্টিম্যাটার থিওরি
পার্টিকেল ফিজিক্স অনুযায়ী, এই বিশ্বে যেমন "ম্যাটার" বা পদার্থ রয়েছে, তেমনই রয়েছে "অ্যান্টি-ম্যাটার"। অর্থাৎ, প্রতিটি কণার বিপরীতে একটি করে প্রতিপদার্থ বা অ্যান্টি-পার্টিকেল বিদ্যমান।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটন মিলে যেমন হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে, ঠিক তেমনিভাবে একটি প্রতি-ইলেকট্রন ও প্রতি-প্রোটন মিলে একটি প্রতি-হাইড্রোজেন পরমাণু তৈরি করে। অ্যান্টিম্যাটার আমাদের চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিজ্ঞান এর অস্তিত্বকে স্বীকার করেছে।
এখন যদি প্রতি-পার্টিকেল দ্বারা তৈরি অদৃশ্য এক জাতি থাকে, তবে তাদেরকে জিন জাতি বলা কি খুব অযৌক্তিক?
২. কোয়ান্টাম সুপারপোজিশন
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এক আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য হলো সুপারপোজিশন। এটি এমন একটি ধারণা, যেখানে কোনো কণা একসাথে একাধিক অবস্থানে থাকতে পারে।
এর মানে হচ্ছে, কিছু বস্তু বা জীব এমনও থাকতে পারে, যারা একইসাথে আমাদের জগতে আছে, কিন্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।
আল্লাহ বলেন:
"নিঃসন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী এবং সকল বিষয়ে জানেন, যা তোমরা জানো না।"
(সূরা আল-বাকারা: ১৩৭)
৩. প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে আরও অনেক মহাবিশ্ব থাকতে পারে। এই ধারণাকে বলে প্যারালাল ইউনিভার্স থিওরি।
কোরআনেও এমন ধারণার ইঙ্গিত পাওয়া যায়:
"আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং অনুরূপভাবে সাত জমিনও সৃষ্টি করেছেন। এসবের মধ্যে তার আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পারো—আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তার জ্ঞানের মধ্যে।"
(সূরা আত-তলাক: ১২)
এই আয়াতের ভিত্তিতে অনেকে মনে করেন, জিন জাতি আমাদের সমান্তরাল কোনো জগতে বসবাস করতে পারে, যা আমাদের চোখে দেখা যায় না।
জিনদের আকৃতি ও রূপ
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জিনের আকৃতি সম্পর্কে তিনটি মূল বর্ণনা পাওয়া যায়:
অদৃশ্যমান: এদের শারীরিক উপস্থিতি টের পাওয়া যায়, কিন্তু দেখা যায় না।
দৃশ্যমান: এরা মানুষের রূপ ধারণ করে আমাদের মাঝে চলাফেরা করতে পারে।
বিকৃত রূপ: কুকুর, বিড়াল, সাপ ইত্যাদির আকৃতি ধারণ করে থাকতে পারে।
আধুনিক পদার্থবিদ্যা যতই উন্নতি করছে, ততই জিন জাতির অস্তিত্বের ধারণা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
যদিও বিজ্ঞানীরা এই জাতির নাম দিয়েছে "এলিয়েন", তবে ইসলাম এর ব্যাখ্যা দিয়েছে ১৫০০ বছর আগেই। অতএব, জিন জাতির অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং, কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান উভয়ই একে সম্ভাব্য ও বাস্তব বলে স্বীকার করে।
আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন বিজ্ঞান একদিন জিনদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারবে?
নুসরাত