ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রাণের উৎপত্তি পানি থেকে, কিন্তু পানির উৎপত্তি কোথায়?

প্রকাশিত: ২২:২৫, ৯ মার্চ ২০২৫

প্রাণের উৎপত্তি পানি থেকে, কিন্তু পানির উৎপত্তি কোথায়?

ছবি: সংগৃহীত।

পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য উপাদান। শুধু তাই নয়, মহাবিশ্বের প্রাণবন্ত সবকিছুর সূচনাও এই পানি থেকেই। তাই তো বলা হয়, "পানির অপর নাম জীবন।" কিন্তু কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে—এই মহাবিশ্বে পানির উৎপত্তি কবে এবং কিভাবে হয়েছিল?

সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নতুন কিছু তথ্য আবিষ্কার করেছেন। যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের মতে, বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পর প্রথম সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় মহাবিশ্বে পানি তৈরি হয়েছিল।

বিগ ব্যাং এবং পানির উৎপত্তি
বিজ্ঞানীদের মতে, বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র, প্রচণ্ড উত্তপ্ত ও ঘন বিন্দু থেকে মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। এরপর মহাবিশ্ব দ্রুত প্রসারিত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়।

প্রথমদিকে মহাবিশ্বে কেবলমাত্র হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছিল। অক্সিজেনসহ অন্যান্য ভারী উপাদান তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ কোটি বছর। এরপর সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি হয় এবং তা হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পানি গঠনের পথ তৈরি করে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, যখন নক্ষত্র তাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ তাপ ও চাপ সৃষ্টি করে। এতে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় এবং তা হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পানি তৈরি করে।

বিজ্ঞান ও ধর্মের মিল
বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে:

"কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী একত্রে সংযুক্ত ছিল? অতঃপর আমি উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছুকে আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?" (সূরা আম্বিয়া: ৩০)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় দেখা যায়, প্রথমে মহাবিশ্ব একটি বিন্দুর মতো ছিল, যা পরবর্তীতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রসারিত হয়। এরপর পানি সৃষ্টি হয় এবং প্রাণের সূচনা ঘটে।

পানি সৃষ্টি: বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ
বিজ্ঞানীদের মতে, পানি রাসায়নিকভাবে দুটি উপাদান—হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে তৈরি। বিগ ব্যাং-এর প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রচণ্ড উত্তপ্ত কণার সমুদ্র ঠান্ডা হয়ে পরমাণুতে রূপ নেয়। কিন্তু তখন অক্সিজেনের অস্তিত্ব ছিল না।

১০ কোটি বছর পর নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় বিক্রিয়ার ফলে অক্সিজেন তৈরি হয়। এরপর সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন মিশে গিয়ে পানি গঠিত হয়।

বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের ধারণার চেয়ে কোটি কোটি বছর আগেই মহাবিশ্বে পানির সৃষ্টি হয়েছিল।


বিজ্ঞান ও ধর্ম—উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। পানির উৎপত্তি ও মহাবিশ্বের গঠনের ইতিহাস আমাদের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

এখন প্রশ্ন থেকে যায়—এত সুক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি কি কেবলই একটি কাকতালীয় ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার ইচ্ছা?         

নুসরাত

×