
রোজা বা সিয়াম ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয়। পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করা একটি ফরজ ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন সুস্থ ব্যক্তির ওপর রোজা রাখা ফরজ। পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানদের প্রতিদিন সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। শারীরিক ও মানসিক উপকারিতাও রয়েছে রোজা পালনের মাঝে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মূলত পরিমিত খাওয়াটাই দীর্ঘজীবন লাভের চাবিকাঠি। পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখা উচিত। রোজা রাখার সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এক মাস রোজা পালনের ফলে শরীরে যেসব জৈব বিষ জমা হয়, তা সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়।
শারীরিক উপকারিতা: খাদ্যাভ্যাস কিংবা আরাম-আয়েশের জন্য মানুষের শরীরের যে ক্ষতি হয় রোজা তা পূরণ করে দেয়। উপবাসকালে শরীরের মধ্যকার প্রোটিন, চর্বি, শর্করা জাতীয় পদার্থগুলো স্বয়ং পাচিত হয়। উপবাসের মাধ্যমে লিভার রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয় ফলে ত্বকের নিচে সঞ্চিত চর্বি, পেশির প্রোটিন, গ্রন্থিসমূহ এবং লিভারে কোষসমূহ আন্দোলিত হয়। যেসব চর্বি জমে শরীরের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেগুলো রোজার সময় দেহের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য ছুটে যায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কোষগুলোর পুষ্টি বিধান হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় যাবতীয় খানাপিনা বন্ধ থাকার কারণে পাকস্থলি, অন্ত্র-নালি, যকৃত, হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়। তখন এরা নিজেদের পুনর্গঠনে নিয়োজিত হতে পারে। শরীর ডিটক্সিফাইড হয় এবং ইমিউনিটি সেল নতুন করে তৈরি হয়। রোজা পালন করার কারণে ফুসফুসের কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগসমূহ নিরাময়েও সহায়তা করে। রোজাব্রত পালনের কারণে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয়।
মানসিক উপকারিতা: রোজার শারীরিক উপকারিতার সঙ্গে রয়েছে মানসিক উপকারিতাও। রোজা রাখার সময় স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় যা ব্রেনের কর্মক্ষমতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। রোজা যেহেতু ধর্মীয় একটি ইবাদত তাই নিয়মিত রোজা রাখার ফলে মানসিক প্রশান্তি অনুভব করা যায়। এর ফলে মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসে। আলসারের রোগীরা রোজা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোজা উপকারী। এছাড়াও বহুমূত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোজা খুব উপকারী।
রোজার খাদ্যাভ্যাস: অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীর সহজেই অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। শরীরটাকে ভালো রাখার উত্তম উপায় হলো রোজা রাখা। শরীরকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান রাখার জন্য রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
রোজার গুরুত্ব: রোজা মানব শরীরের কোনো ক্ষতি করে না। আমাদের রক্তে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ এবং ক্ষতিকর পদার্থ ঘুরে বেড়ায়। এ রক্তকে পরিশোধন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে রোজা। মাঝে মাঝে রোজা, উপবাস বা ফাস্টিং একজন মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করে তাকে দীর্ঘজীবী করে। বাড়তি ওজন ঝেরে ফেলে একজন রোজাদার ব্যক্তি স্লিম, স্মার্ট মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে করে শরীরে নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। রোজায় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের এসিড এ সময় ধীরগতিতে নিঃসরিত হয় যা হজম শক্তিজনিত নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তাছাড়া যে কোনো নেশাদ্রব্য থেকে মুক্তি পেতে রোজা একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
তারাবির উপকারিতা: পবিত্র রমজানের অন্য একটি ইবাদত তারাবি নিয়েও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা প্রমাণিত হয়েছে যে, তারাবি নামাজ হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও শরীরের পেশি মজবুত করে। মেরুদণ্ডসহ শরীরের অন্যান্য সংযোগস্থল নমনীয় করে ও রক্তপ্রবাহকে অধিক ক্রিয়াশীল করে। তারাবিতে বেশি রুকু ও সিজদার ফলে রক্ত চলাচল ও শ্বাস গ্রহণ প্রক্রিয়ার উন্নতির পাশাপাশি পিঠে, জয়েন্টে ও মাংসপেশিতে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
সিয়াম সাধনার ফলে আমরা হবো স্বাস্থ্যবান ও পবিত্র আত্মার অধিকারী। আল্লাহ আমাদের সিয়াম ও তারাবি ভালোভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন।