ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহরে

সালমা আহমেদ

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৯ মার্চ ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহরে

পুরান ঢাকার নাম আসলে অজান্তেই আরেকটি বাক্য চলে আসে- বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি। আসলেই তাই। মুঘল আমলের এই শহরে অলি গলির শেষ নেই। চকবাজার, ঠাটারিবাজার, তাঁতীবাজার, ইসলামপুর- নামগুলো মানুষের মুখে মুখে। বিশেষ করে শপিংয়ের কথা উঠলেই ইসলামপুরের কথা সবার আগে মনে পড়ে। চলছে রোজার মাস। কয়দিন পরই ঈদুল ফিতর। ঈদের কেনাকাটা অনেকেই ইসলামপুর থেকে করতে চান কম দামের জন্য। রোজার ঠিক আগের দিনই ঘুরে এলাম এই শহরের অলিগলি। প্রায় প্রতিটা জায়গাতেই অল্প করে ঢুঁ মেরে এলাম। কি নেই সেখানে! ঘর গৃহস্থালীর জিনিস থেকে শুরু করে সবকিছুই পাওয়া যায়। ঈদের জামা কাপড় হোক, কিংবা ঘরের জিনিসপত্র হোক- সবই আছে। তবে পুরান ঢাকার বাইরে থেকে আমার মতো যারা যাবেন, তাদের কেনাকাটার তালিকাটা দীর্ঘ করে নিয়ে যেতে হবে। তবেই গিয়ে পোষাবে। রোজার ঈদে সাধারণত উপহারের তালিকাটা বেশ বড়-ই থাকে। অনেকেই এ সময় যাকাত ও দান করে থাকেন। যদি এই উপহারের সমস্তটা অল্প দামে ভালো কিছু কিনতে চান, তবে আগে তালিকা করতে হবে। আর জানতে হবে কোথায় কি পাওয়া যায়। সেজন্য ভালো চিনে এবং দামাদামি করতে পারে এমন কাউকে সঙ্গী করবেন। অনেক কেনাকাটা পাইকারি দামে কিনতে চাইলেই অতদূরে গিয়ে সারাদিন থেকে পোষাবে। না হয় বৃথাই যাওয়া। যেহেতু বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহর, পড়তে হবে বিশাল যানজটে। অতদূর রাস্তা হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর। তাছাড়া গলির ভিতরে রিক্সাগুলো স্থবির হয়ে থাকে। তারই পাশ দিয়ে মানুষের যাতায়াত। গরম, যানজট, জনজট- সব মিলিয়ে অনেক ধৈর্য থাকতে হবে। রোজা রেখে ওখানে যাওয়াটা সত্যিই কষ্টের হয়ে যাবে। আর যদি যেতেই হয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন সারাদিনের জন্য। মাথাও ঠান্ডা থাকতে হবে। পুরান ঢাকার আরেক বিস্ময় হচ্ছে ইফতার বাজার। সেখানে পাবেন হরেক রকম বাহারি ইফতার। ‘বড় বাপের পোলায় খায়’- এই নামটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অদ্ভুত লাগে। ১৫ রকমের পদ আর ১৬ রকমের মসলায় তৈরি এ খাবার। এছাড়া রয়েছে প্রায় শ’খানেক ইফতার আইটেম। রয়েছে আস্ত খাসী, মুরগী, কোয়েল পাখির ফ্রাই।
তাঁতীবাজার গিয়েছিলাম রুপার চুড়ি ওয়াস করতে। ১০/১৫ মিনিট মার্কেটের সামনে অপেক্ষা করছিলাম। দেখলাম একটা ভ্যান চারপাশে একটা লোক বিচিত্র ভঙ্গিমায় ময়ান করে পরোটা বানাচ্ছে, সঙ্গে সবজি। এক দল উঠতে না উঠতেই আরেক দল বসে যাচ্ছে। টুল ফাঁকাই যাচ্ছে না। ঠিক তখনি একটি বিষয় দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম- পাশেই ছোট একটি মন্দির। কাজে যাওয়া মানুষগুলো পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে ঘণ্টা বাজিয়ে যাচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি এই ভক্তি দেখে মনটা ভরে গেল। ধর্ম যার যার, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি আর প্রার্থনা তো আসলে একই। মুসলিমরা আল্লাহকে ডাকে। আর অন্য ধর্মের মানুষগুলো তাদের নিজ নিজ স্রষ্টাকে ডাকে। বৈচিত্রে ভরা এই পুরান ঢাকার বৈচিত্রতা মুগ্ধ করেছে আমায়। এই রমজানে একবার অন্তত সেখানকার ঐতিহ্যবাহী এই ইফতার বাজার থেকে ইফতার এনে খাওয়া যেতেই পারে।

×