ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘরে জয়নুল, কামরুলসহ বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৯ মার্চ ২০২৫

জাদুঘরে জয়নুল, কামরুলসহ বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বরেণ্য শিল্পীদের প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা

প্রদর্শনালয়ে প্রবেশ করতেই নয়নজুড়ে  ছড়িয়ে যায় প্রশান্তির পরশ। পথিকৃৎ  থেকে বরেণ্য শিল্পীদের সৃজিত চিত্রকর্মগুলো ঝুলছে বৃত্তাকার গ্যালারির চারপাশের  দেওয়ালে। সেই সুবাদে চোখ চলে যায় এদেশের শিল্প আন্দোলনের পথ প্রদর্শক জয়নুল আবেদিনের আঁকা ক্যানভাসে। শিল্পাচার্যের চিত্রিত সেই চিত্রপটে মূর্ত হয়েছে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা এক দৃশ্য। ধূসর রঙের জমিনে সুনিপুণ ড্রইংয়ের আশ্রয়ে উদ্ভাসিত হয়েছে বিষয়বস্তু।

কোনো এক ফসলের মাঠে চাষাবাদের কর্মযজ্ঞতায় তৎপর এক জোড়া গরুর দেখা মেলে। আর সে গরুর শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখা দড়ি পেছন থেকে ধরে রেখেছে দুই কৃষক। দড়ির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মই। সেই মইয়ের ওপর বসে ফসলের মাড়াই  করছে কৃষকদ্বয়। এই ছবিটি থেকে চোখ সরাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় আরেক কিংবদন্তি শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের আঁকা ছবিতে। রঙের খেলায় বর্ণিল সে চিত্রপটের জমিনজুড়ে মূর্ত হয়েছে নানা লোকজ অনুষঙ্গ।

দেখা মেলে  ফুল, পাখি থেকে লতা-পাতার সৌ্িরন্দর্যময়তা। কামরুল হাসানের আরেকটি চিত্রপটে লাল জমিনের মাঝে চমৎকারভাবে দৃশমান  হয়েছে শরীরে রকমারি নকশার অবয়ময় এক গরু। জ্যামিতিক ফর্মের সন্ধান মেলে প্রখ্যাত চিত্রকর কাইয়ুম  চৌধুরীর চিত্রিত চিত্রকর্মে।  সেই ফর্মের ভেতর প্রস্ফুটিত হয়েছে বৃক্ষ, ফুল-পাখিসহ নিসর্গের বহুবিধ বিষয়।

শিল্পরসিকের হৃদয় রাঙানো এসব ছবি নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে জাদুঘরের  সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ^সভ্যতা বিভাগ। এই বিভাগের সংগৃহীত নিদর্শন  থেকে সাজানো হয়েছে এই শিল্পায়োজন। 
নতুন প্রজন্মকে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষ্যে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাদুঘরের কিপার শক্তি পদ হালদার বলেন, সুদীর্ঘকালের চর্চায় বাংলাদেশের শিল্পকলা আজ বৈচিত্র্যময়তার মধ্যি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সমৃদ্ধি অর্জন করেছে।

আর জাতীয় জাদুঘর বাঙালির জাতির আত্মপরিচয়ের হাজার বছরের শিল্পকলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলের ধরার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সঙ্গে শিল্পকলার সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। সেই প্রচেষ্টার একটি প্রয়াস এই প্রদর্শনী।    
সব মিলিয়ে এই প্রদর্শনীতে ৩৬ শিল্পীর ৭৭টি শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে। জয়নুল, কামরুল ও কাইয়ুম ছাড়া প্রদর্শনীতে রয়েছে এস. এম. সুলতান, রফিকুন নবী, এম. মহিউদ্দিন, মাসুদুল আলম, মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম, এ. কে. এম. কাইয়ুম, বীরেন সোম, এমদাদুল হক মো. মতলুব আলী, আব্দুল মুকতাদির, ফকরুজ্জামান, মোহাম্মদ মোহসিন, তাজুল ইসলাম, গৌতম চক্রবর্তী, দিলারা বেগম জলি, তন্দ্রা দাস, মো. রেজাউল করিম, তরুণ কুমার ঘোষ, জাহিদ মুস্তাফা, মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম,  সৈয়দ ইকবাল, মাকসুদা ইকবাল নীপা, সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার, উত্তম কুমার কর্মকার, নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা, লায়লা শার্মিন, মো. তানভীর জালাল, আনিছুজ্জামান সোহেল, আলী আকবর,  জেবুন নাহার নাঈমা, ফারহানা ইয়াসমীন, উপমা দাস, তাদাইচি সাকামোতো (জাপানি) এবং যোসাইয়া ম্যাকনামার (ফিজি)  শিল্পকর্ম।
পক্ষকালব্যাপী চলমান এ প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল শনিবার।

×