ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ মার্চ ২০২৫, ২৫ ফাল্গুন ১৪৩১

অস্ত্র প্রতিযোগিতায় শীর্ষে যে ৭টি দেশ

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ৭ মার্চ ২০২৫

অস্ত্র প্রতিযোগিতায় শীর্ষে যে ৭টি দেশ

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে অস্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে কিছু দেশ অস্ত্র উৎপাদনে এতটাই অগ্রসর যে তারা বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্যের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের শীর্ষ ৭টি অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশএবং তাদের সামরিক ক্ষমতার বর্তমান অবস্থা।

১. যুক্তরাষ্ট্র – বিশ্বের প্রধান অস্ত্র রফতানিকারী

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন Lockheed Martin, Boeing, Raytheon Technologies, Northrop Grumman এবং General Dynamics, বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র উৎপাদন শুধুমাত্র নিজ দেশের সামরিক শক্তি বাড়ায় না, বরং ন্যাটো এবং অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করে।

২. রাশিয়া – প্রাচ্যের অস্ত্রশক্তি

রাশিয়া সামরিক শক্তির দিক থেকে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ। দেশটির প্রধান প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে Rostec, Almaz-Antey, United Aircraft Corporation এবং Uralvagonzavod। রাশিয়ার অস্ত্র, বিশেষ করে S-400 মিসাইল সিস্টেম, T-90 ট্যাংক এবং Su-57 যুদ্ধবিমান, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া প্রধানত ভারত, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রফতানি করে থাকে।

৩. চীন 

চীন সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অস্ত্র উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রসর হয়েছে। China North Industries Group (NORINCO), Aviation Industry Corporation of China (AVIC) এবং China South Industries Group এর মতো কোম্পানিগুলো চীনের সামরিক শক্তিকে সুসংহত করেছে। চীন মূলত নিজস্ব সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পাকিস্তান, মিয়ানমার এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে অস্ত্র রফতানি করে থাকে।

৪. ফ্রান্স – ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র প্রস্তুতকারী

ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা খাত বেশ শক্তিশালী এবং এটি ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ। Dassault Aviation (Rafale যুদ্ধবিমান), Naval Group (সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ), Thales এবং MBDA এর মতো কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে। ফ্রান্সের প্রধান অস্ত্র আমদানিকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

৫. জার্মানি – উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র উৎপাদনকারী

জার্মানি মূলত উন্নত প্রযুক্তির ট্যাংক, সাবমেরিন এবং ছোট অস্ত্র উৎপাদনে বিশেষ পারদর্শী। Rheinmetall, Krauss-Maffei Wegmann (KMW), ThyssenKrupp Marine Systems (TKMS) এর মতো কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক অস্ত্র সরবরাহ করে। জার্মানির প্রধান অস্ত্র ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সৌদি আরব এবং তুরস্ক।

৬. যুক্তরাজ্য 

যুক্তরাজ্য সামরিক প্রযুক্তি এবং উন্নত অস্ত্র উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। BAE Systems, Rolls-Royce (এভিয়েশন ইঞ্জিন), Babcock International এবং MBDA UK এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক যুদ্ধবিমান, জাহাজ এবং ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করে। যুক্তরাজ্যের প্রধান অস্ত্র ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত।

৭. ইসরায়েল

ইসরায়েল সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যতম অগ্রণী দেশ। দেশটির Israel Aerospace Industries (IAI), Rafael Advanced Defense Systems, Elbit Systems অত্যাধুনিক ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (Iron Dome), এবং উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি উৎপাদন করে। ইসরায়েল তার সামরিক প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে রফতানি করে থাকে।

বিশ্বের এই শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলো শুধু তাদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করছে না, বরং বৈশ্বিক রাজনৈতিক ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অস্ত্র উৎপাদন এবং রফতানির মাধ্যমে তারা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে। তবে, অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলে বিশ্বে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

অস্ত্র উৎপাদন বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ইসরায়েলের মতো দেশগুলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্ত্র রফতানির মাধ্যমে বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে এই প্রতিযোগিতা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য আশীর্বাদ নাকি হুমকি—এটি নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান।

 

 

 

 

 

কানন

×