ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৭ মার্চ ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

একাত্তরের উত্তাল মার্চের স্মৃতি যেন কথা বলছে লাল সবুজের পতাকায়

মার্চ মাস এখন। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ মাসে কত কী-ই না ঘটেছে ঢাকায়! গণহত্যার নীরব সাক্ষী হয়েছে এই শহর। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক- কর্মচারীদের হত্যা করেছে। বাদ যাননি মধুর ক্যান্টিনের সেই ‘মধু দা-ও।’ রোকেয়া হলে ছাত্রীদের পাশবিক  নির্যাতন করা হয়। হত্যা করা হয়।

কয়েক দিন স্তূপাকারে পড়েছিল লাশ। পরে বড় গর্ত করে একসঙ্গে অনেক লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। পাকিস্তানিদের সেই অপারেশন সার্চ লাইটের ভয়াল স্মৃতি সে সময়ের মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারেননি। আমরা আজ যারা ঢাকায় বাস করি তারা কি ভুলে গেছি? এই মার্চ মাসেই ফুঁসে উঠেছিল ঢাকা। বিক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী শতভাগ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তানিদের অযুত ষড়যন্ত্র-বঞ্চনা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের মার্চে। আমাদের স্বাধীনতার মাস মার্চ।

২৫ মার্চ কালরাত্রি যেমন বেদনায় ডুবায় তেমনি নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখায় ২৬ মার্চ। জাতীয় জীবনে তাই মার্চের আলাদা গুরুত্ব। নতুন বাস্তবতায় নতুন শপথে এবারও উদ্যাপিত হবে স্বাধীনতা দিবস। তার আগেরদিন কালরাত্রির কথা স্মরণ করা হবে। পাশাপাশি মার্চের প্রতিটি দিন ঐতিহাসিক। তাৎপর্যপূর্ণ। আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি আমরা যেন সেই তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারি।   
রোজার প্রভাব প্রতিদিনের জীবনে ॥ রোজার সময়টা একটু অন্যরকম হয়। বছর ঘুরে আবারও এসেছে সেই অন্যরকম সময়। এর প্রভাবে রাজধানীবাসীর প্রতিদিনের জীবন আমূল বদলে গেছে। অফিস সময়ের কথাই যদি বলি, সবাই তো ৯টা-৫টা অফিস করে অভ্যস্ত। কিন্তু এখন সকাল ৯টায় অফিসে  ঢুকছেন বটে। বের হয়ে পড়ছেন বেলা সাড়ে ৩টায়।

অর্থাৎ কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে দিনের সমস্ত কাজ সারতে হচ্ছে। তাই অফিস- আদালতে বেশ হুড়োহুড়ি। অফিস শেষ করে যতদ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরতে চাইছে মানুষ। এ কারণে রাস্তাঘাটেও ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। হুড়োহুড়ি। রোজার সবচেয়ে সুন্দরতম দিক সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ইফতার। সাধারণ সময়ে যে মানুষটি সন্ধ্যার আগে বাসায় ফেরার কথা কল্পনাও করতে পারতেন না সেই তিনি এখন ইফতারের আগে আগে ঠিক বাসায় ঢুকছেন। সবার সঙ্গে ইফতার করছেন।

এর ফলে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় হচ্ছে। তবে অধিকাংশ মানুষের রুটিন একই হওয়ায় বাড়ছে দুর্ভোগও। যানজট অনেক বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার আগে, এমনকি দুপুরের দিকে গাড়ির চাকা যেন ঘুরতেই চায় না। গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ বাড়ছে তো বাড়ছেই। মেট্রোরেলে ঠাঁই পাওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। একসঙ্গে এত যাত্রী দরজা আটকে দাঁড়াচ্ছেন যে, ট্রেন সময়মতো প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যেতে পারছে না। কারও হাত বা কারও পীঠে থাকা ব্যাগ দরজায় আটকে যাচ্ছে।

জাপানের মতো যাত্রীদের ঠেলে ট্রেনের ভেতরে ঢোকানোর দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে এখন। দ্রব্যমূল্যের চাপেও চ্যাপ্টা হচ্ছে মানুষ। রমজানে অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের পণ্যমূল্য কমে। আমাদের দেশে বেড়ে আকাশে ওঠে যায়। এই যেমন লেবুর কথাই ধরুন, কদিন আগে যে দাম ছিল তার কতগুণ বেড়েছে রীতিমতো হিসাব করে বলতে হবে। অবশ্য অন্য সব উদ্বেগকে ছাপিয়ে গেছে ছিনতাই আতঙ্ক।

ঢাকার যে কোনো নির্জন রাস্তা এখন অনিরাপদ। ব্যস্ত সড়কেও চাপাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা। পিলে চমকে যাওয়ার মতো অনেক ভিডিও এরই মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এবারের রমজান তাই বিচিত্র বাস্তবতার মধ্য দিয়ে পার করতে হবে রাজধানীবাসীকে।

×