
ছবি: সংগৃহীত।
দর্শনের ইতিহাসে সক্রেটিস এক অবিস্মরণীয় নাম। তার শিক্ষা, চিন্তাধারা এবং দর্শন আজও বিশ্বজুড়ে আলোচিত। কিন্তু তার মৃত্যুর আগে শেষ মুহূর্তের ভাবনা ও শিক্ষা কী ছিল? কীভাবে তিনি মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন? এই বিষয়গুলো আজও দার্শনিক, গবেষক ও সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। এই প্রতিবেদনে আমরা সক্রেটিসের শেষ শিক্ষা ও তার দর্শনের মূল বার্তা বিশ্লেষণ করবো।
সক্রেটিসের বিচার ও মৃত্যুদণ্ড
সক্রেটিসের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল যে, তিনি এথেন্সের তরুণদের বিপথগামী করছেন এবং দেবতাদের প্রতি অবিশ্বাসী। এই অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিষপান করিয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সক্রেটিস ভীত বা বিচলিত ছিলেন না; বরং তিনি তার দার্শনিক অবস্থান অটুট রেখেছিলেন।
তার শেষ শিক্ষা ও দর্শন
১. মৃত্যুভয় নয়, ন্যায়ের অনুসন্ধান: সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, সত্য ও ন্যায়ের অনুসন্ধানই মানুষের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বরং অন্যায়কে ভয় পাওয়া উচিত।
২. আত্মার অমরত্ব: প্লেটোর "ফেডো" গ্রন্থে সক্রেটিসের শেষ কথোপকথনে দেখা যায়, তিনি আত্মার অমরত্বে বিশ্বাস করতেন। তার মতে, শরীর নশ্বর হলেও আত্মা অবিনশ্বর এবং এটি মৃত্যুর পরও টিকে থাকে।
৩. অজানাকে জানার আগ্রহ: মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন, "আমি জানি না মৃত্যুর পরে কী আছে, কিন্তু যদি সত্য জানতে পারি, তবে সেটাই হবে নতুন এক জ্ঞানপ্রাপ্তি।" তিনি বিশ্বাস করতেন, অজানাকে জানার আকাঙ্ক্ষাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের পথ।
সক্রেটিসের মৃত্যুর আগের শিক্ষা আমাদের এখনো দার্শনিকভাবে আলোড়িত করে। ন্যায়, সত্য এবং আত্মজিজ্ঞাসার যে শিক্ষা তিনি দিয়ে গেছেন, তা আজও মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। তার শিক্ষা থেকে আমরা শিখতে পারি, মৃত্যু নয়, বরং আমাদের নৈতিকতা, সত্যের অনুসন্ধান এবং জ্ঞানের প্রতি আকর্ষণই হওয়া উচিত মানবজীবনের মূল লক্ষ্য।
নুসরাত