ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

ইয়ারফোন ব্যবহার করে এই সমস্যাগুলো আপনারও হচ্ছে না তো?

প্রকাশিত: ১৬:২৬, ৬ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৮, ৬ মার্চ ২০২৫

ইয়ারফোন ব্যবহার করে এই সমস্যাগুলো আপনারও হচ্ছে না তো?

ছ‌বি: সংগৃহীত

প্রযুক্তি আমাদের সময়ের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অথচ বিপজ্জনক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি। এরকমই একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস হলো ইয়ারফোন বা হেডফোন। সকালে হাঁটার সময়, রাস্তা পার হওয়ার সময়, মেট্রো বা বাসে ভ্রমণের সময়, ক্যাফেতে কফি পান করার সময় বা অফিসে কল রিসিভ করার সময়, দিনের বিভিন্ন মুহূর্তে অনেক মানুষকে ইয়ারফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে আশপাশের মানুষকে বিরক্ত না করলেও, নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমান করেছে যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় এক বিলিয়ন তরুণ অনিরাপদ উপায়ে ইয়ারফোন ব্যবহারের কারণে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইয়ারফোন ব্যবহারের প্রধান সমস্যাটি হলো অতিরিক্ত উচ্চ শব্দে শোনা। যেহেতু ইয়ারফোন কানের খুব কাছ থেকে উচ্চমাত্রার শব্দ উৎপন্ন করতে পারে, তাই এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তবে শুধু উচ্চ শব্দ নয়, ইয়ারফোন দীর্ঘ সময় ব্যবহারের কারণেও ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া, ইয়ারফোন বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়, যা জীবাণুর সংক্রমণের সুযোগ তৈরি করে। বিশেষত, একে অপরের সঙ্গে ইয়ারফোন ভাগ করে নেওয়ার ফলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়, যা কানের জন্য ক্ষতিকর।

কীভাবে উচ্চ শব্দের ইয়ারফোন কানের ক্ষতি করে?

ইয়ারফোন থেকে উৎপন্ন শব্দ তরঙ্গ আমাদের কানে পৌঁছে, যার ফলে কানের পর্দা কাঁপতে থাকে। এই কম্পন ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কানে পৌঁছে যায় এবং ককলিয়াতে পৌঁছায়, যা তরলভর্তি একটি চেম্বার এবং এতে হাজারো ক্ষুদ্র রোম (হেয়ার সেল) থাকে। যখন কম্পন ককলিয়াতে পৌঁছায়, তখন তরল আন্দোলিত হয় এবং সেই সাথে রোমগুলোও নড়াচড়া করে। শব্দ যত জোরে হয়, কাঁপন তত বেশি হয় এবং রোমগুলোও তত বেশি নড়ে ওঠে।

দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ শব্দে গান শোনার ফলে এই রোমগুলো ধীরে ধীরে কম্পনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়। কখনো কখনো উচ্চ শব্দের কারণে রোম কোষগুলি ভাঁজ হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়, যা অস্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাসের অনুভূতি সৃষ্টি করে। কিছু ক্ষেত্রে, এই কোষগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও, তারা সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, যা স্থায়ী বধিরতা বা শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।


ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে যেসব সমস্যা হতে পারে

NIHL: শুধু উচ্চ শব্দই নয়, দীর্ঘ সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলেও Noise-Induced Hearing Loss (NIHL) হতে পারে।

টিনিটাস: ককলিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত রোম কোষগুলোর কারণে কানে একটানা বেজে যাওয়া, গুঞ্জনধ্বনি বা গর্জনের মতো শব্দ অনুভূত হতে পারে, যা টিনিটাস নামে পরিচিত।

হাইপারাকিউসিস: যারা টিনিটাস সমস্যায় ভুগছেন, তাদের ৫০%-এর বেশি লোক স্বাভাবিক পরিবেশের শব্দের প্রতিও অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়েন। এই সমস্যাকে হাইপারাকিউসিস বলা হয়।

শ্রবণশক্তি হ্রাস: উচ্চ শব্দ বা দীর্ঘ সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে কানের রোম কোষগুলো অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।

মাথা ঘোরা: উচ্চ শব্দের কারণে কানের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে গিয়ে অনেক সময় মাথা ঘোরার সমস্যাও হতে পারে।

কানে সংক্রমণ: যেহেতু ইয়ারফোন সরাসরি কানের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, এটি বায়ু চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা কানে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে, যা ইয়ারফোনের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের কানে সংক্রমিত হতে পারে।

অতিরিক্ত কানের ময়লা: দীর্ঘ সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের ফলে কানে ময়লা জমে যায়, যা টিনিটাস, শ্রবণ সমস্যা, কানে ব্যথা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

কানে ব্যথা: অনুপযুক্তভাবে ফিট করা ইয়ারফোন বা দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে কানে ব্যথা হতে পারে, যা কানের ভেতর থেকে চোয়াল পর্যন্ত অনুভূত হতে পারে।

মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব: ইয়ারফোন থেকে উৎপন্ন তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ দীর্ঘ সময় ধরে মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। উচ্চ শব্দের ফলে স্নায়ুতন্তুর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কানের সংক্রমণের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

শ্রবণশক্তি রক্ষা করতে করণীয়

নিচের কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে ইয়ারফোন ব্যবহারের ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব:

  • ইয়ারফোনের শব্দের মাত্রা খুব বেশি না বাড়ানো
  • উচ্চ শব্দ এবং দীর্ঘ সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের অভ্যাস কমানো
  • নয়েজ-ক্যান্সেলিং হেডফোন ব্যবহার করা
  • ওভার-দ্য-ইয়ার হেডফোন ব্যবহার করা, যাতে শব্দ সরাসরি কানের ভেতরে প্রবেশ না করে
  • ইয়ারফোন নিয়মিত পরিষ্কার করা, যাতে ব্যাকটেরিয়া, ঘাম ও ত্বকের মৃত কোষ জমতে না পারে
  • ভ্রমণের সময় ইয়ারফোন ব্যবহার না করা, কারণ ইতিমধ্যেই চারপাশের শব্দের কারণে শব্দমাত্রা অনেক বেশি থাকে

এই সকল অভ্যাস গড়ে তুললে কানের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।

 

তথ্যসূত্র: https://www.manipalhospitals.com/hebbal/blog/harmful-effects-of-listening-music-with-earphones/

আবীর

×