ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

নদীবিহীন দেশগুলো বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করে যেভাবে

প্রকাশিত: ১৬:০২, ৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৬:০৭, ৪ মার্চ ২০২৫

নদীবিহীন দেশগুলো বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করে যেভাবে

প্রতীকী ছবি

মানুষ, প্রাণ, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে সজীব, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে নদীর বিকল্প নেই। নদ-নদীর অববাহিকায়ই গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতার ইতিহাস। তবে অবাক হওয়ার মতো বিষয়, পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে একটিও নদী নেই। চলুন জেনে নিই এমন ১০টি নদীবিহীন দেশ ও তাদের অত্যাধুনিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে:

১. সৌদি আরব

নদীবিহীন আয়তনে (২১ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিমি) সবচেয়ে বড় দেশ সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির বেশিরভাগ অংশ জুড়েই রয়েছে মরুভূমি, যা দেশটিতে নদী না থাকার অন্যতম কারণ। তবে এই প্রতিকূল ভূ-প্রকৃতির মাঝেও এখানকার পানি ব্যবস্থাপনা চমৎকার। ভূগর্ভস্থ ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা মুক্ত করার কারখানা এবং পানির পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণ করে সৌদি আরব। দেশটির খাবার পানির ৭০ শতাংশই আসে সাগরের পানির লবণাক্ততা মুক্ত করার মাধ্যমে।

২. বাহরাইন

পারস্য উপসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইন। নদীবিহীন এই দেশটি সাগরের লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ও ভূগর্ভস্থ কূপের পানির উপর নির্ভর করে। এখানে লবণাক্ত পানি পরিশোধন করার আধুনিক ও উন্নতমানের প্রযুক্তি রয়েছে।

৩. কুয়েত

সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ হওয়া সত্ত্বেও কুয়েতে কোনো প্রাকৃতিক নদী নেই। দেশটির জনগণ বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, ভূগর্ভস্থ জলাধার এবং লবণ নিষ্কাশন প্ল্যান্টের মাধ্যমে লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধ ও খাবার উপযোগী করে পানির চাহিদা মেটায়।

৪. সংযুক্ত আরব আমিরাত

মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক শহরসমৃদ্ধ আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে কোনো নদী নেই, তবে এখানে ওয়াদি (শুষ্ক নদীখাত) রয়েছে, যা বর্ষার মৌসুমে পানিতে ভরে যায়। মরুময় এই দেশটি প্রধানত লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং কৃত্রিম জলাধারের উপর নির্ভর করে।

ভূগর্ভস্থ পানির একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয় এখানকার কৃষিতে।

৫. কাতার

তেল শিল্পের কারণে অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে আছে উপসাগরীয় দেশ কাতার। তবে কোনো নদী না থাকায় কাতার বেশ সমস্যায় আছে। ভূগর্ভস্থ জলাধার ও লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ করে দেশটি। কাতারের স্বাদু পানির ৯৯ শতাংশই আসে পানির লবণাক্ততা মুক্তকরণের মাধ্যমে।

৬. মালদ্বীপ

ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি হওয়ায় ভারত মহাসাগরের প্রবাল দ্বীপপুঞ্জের দেশ মালদ্বীপেও কোনো নদী। দেশটির স্বাদু পানির প্রধান উৎস হলো বৃষ্টি, লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধকরণ এবং ভূগর্ভস্থ কূপ।

৭. ওমান

স্থায়ী নদীবিহীন এই দেশটিতে রয়েছে কিছু মৌসুমী জলাধার, যা ভারী বৃষ্টিপাতে পানিপূর্ণ হয়। দেশটি প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানি ও লবণাক্ত পানি বিশুদ্ধ প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে।

৮. লিবিয়া

সাহারা মরুভূমি অধ্যুষিত উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়াও নদীবিহীন। দেশটি বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণে বৃহৎ "গ্রেট ম্যানমেইড রিভার প্রকল্প" চালু করেছে, যা গভীর ভূগর্ভস্থ জলাধার থেকে পানি সংগ্রহ করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে।

৯. ভ্যাটিকান সিটি

মাত্র ০.৪৯ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই দেশটিতেও কোনো নদী নেই। জনসংখ্যা বিবেচনায়ও এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ইতালির রাজধানী রোম থেকে পানি সরবরাহ করে ক্ষুদ্রতম এই দেশটি।

১০. ইয়েমেন

ইয়েমেনে কোনো স্থায়ী নদী নেই, তবে ভারী বৃষ্টিপাতের পর এখানে মৌসুমী জলধারা বা ঝরনা সৃষ্টি হয়। মারাত্মক পানি সংকটে ভোগা এই দেশটি মূলত ভূগর্ভস্থ জলাধার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ করে।

উপরে আলোচিত দেশগুলো ছাড়াও একটিও নদী নেই এমন দেশের তালিকায় আরও রয়েছে কমোরোস, জিবুতি, কিরিবাতি, নাউরু, টোঙ্গা, ট্রুভ্যালু প্রভৃতি।

 

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

রাকিব

×