
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর বিশেষায়িত স্কুল ‘কানন’ কেরানীগঞ্জের বসিলায় অবস্থিত এডব্লিউএফের স্থায়ী ক্যাম্পাসে বার্ষিক দুই সপ্তাহব্যাপী ঈদ হস্তশিল্প মেলার আয়োজনের উদ্বোধন করে। মেলার উদ্বোধন করেন রানার গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এর চেয়ারম্যান এবং অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর উপদেষ্টা জনাব হাফিজুর রহমান খান।
প্রায় ১৫০জন অটিস্টিক শিশু ও কিশোর এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। অটিস্টিক শিশুদের তৈরি ও রঙ করা চিত্রকর্ম, হস্তনির্মিত শোপিস, জাতিগত পোশাক, ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, গয়না এবং অন্যান্য সাজসজ্জার সামগ্রীসহ বেশকিছু হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়।
মেলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনিকা তাবাসসুম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, “আজকের মেলার যেসব সামগ্রী প্রদর্শন করা আছে প্রত্যেকটাই আমাদের অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের বিশেষায়িত স্কুল কাননের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা। আমাদের স্কুলে একটা ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার আছে। ওখানে ওদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেইসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেসব সামগ্রী আমরা পেয়ে থাকি সেগুলো আমরা এই মেলায় বিক্রি করি। এখানে যারা অভিভাবক, বাইরের অতিথিরা আছেন তাদেরকেও আমরা আহ্বান করছি মেলায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
আনিকা তাবাসসুম বলেন, আমরা যখনই কোনো একটা ডিজেবিলিটি (অক্ষমতা) নিয়ে শুনি সেটা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কোনো শিশু হোক বা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু হোক, শিশু কথাটা সবসময়ই আসে। আমরা ভেবে থাকি ওরা সবসময় ছোটই থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা এটা না। একটা বয়সের পরে কিন্তু বাচ্চারা বেড়ে ওঠে, ওরা টিনএজার হয় এরপর এডাল্ট হয়। তখন কিন্তু তাদের প্রশিক্ষণের ধরনটা পরিবর্তন হয়। আমরা ছোট বাচ্চাকে যে প্রশিক্ষণ দিবো সেটার সাথে একটা বড় ব্যক্তির প্রশিক্ষণের একটা ভিন্নতা থাকবে।
তিনি বলেন, ভোকেশনালের আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে- এখন যারা বাচ্চা আছে তাদের সাথে অভিভাবক আছেন তাদেরকে দেখাশোনা করার জন্য, কিন্তু একটা বয়সের পর কিন্তু বাবা-মা থাকবে না, কোনো গার্জিয়ান থাকবে না। তখন এই বাচ্চাদের কী হবে? বাচ্চারা যাতে আরও বেশি সাবলম্বী হয় সেল্ফ ডিপেনডেন্ট (আত্মনির্ভরশীল) হয় তার জন্য ওদেরকে ভোকেশনাল ট্রেনিংটা দেয়া হয়। ওদেরকে সেলাই করা, রং করা, ঈদের কার্ড বানানো ইত্যাদি শেখানো হয়। পাশাপাশি যেসব বিষয় আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হওয়া শিখায় যেমন কিছু একটা রান্না করা বা কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রাখা, রুম পরিস্কার করা আবার কিছু অফিশিয়াল কাজ যেমন একটা ইমেইল কীভাবে পাঠাতে হবে, ফটোকপি কীভাবে করতে হয় এমন সব কাজ তাদের শেখানো হয় যেন তাদের যে দক্ষতা আছে সেই অনুযায়ী একটা কাজ অন্তত করতে পারে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রানার গ্রুপ অফ কোম্পানিজ এর চেয়ারম্যান এবং অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর উপদেষ্টা জনাব হাফিজুর রহমান খান বলেন, আজকে এখানে এসে গিল্টি ফিলিংস (অনুশোচনা) হচ্ছে, কেন এতোদিন আসিনি। নিজেকে এখানে অতিথি মনে করিনা, অংশ মনে করি। তরুণ প্রজন্মকে বলবো তারা যেন উদ্যোগ নিয়ে এটা এগিয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন-এর সাথে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভালভাবে যুক্ত থাকতে পারছি না। এই শিশুরা যে অনেক সুন্দর জিনিস তৈরি করতে পারে আপনারাও দেখবেন। তারা যদি জিনিসগুলো সেল (বিক্রি) করতে পারে, তাহলে এখান থেকে তাদের মাসিক পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিবো। ভবিষ্যতে তারা তাদের কর্ম দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করবে।
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ২০০৪ সাল থেকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত বিশেষ সাথে কাজ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষামূলক কর্মসূচির একটি অংশ হিসেবে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত। ১২বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা দিয়ে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতে শেখে।
আজকে (৪ মার্চ) শুরু হওয়া মেলা ১৮ই মার্চ (শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত) সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে বলে জানান ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন আনিকা তাবাসসুম।
শিহাব