ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সবচেয়ে বেশি সরকারি ভাষাবিশিষ্ট দেশের নাম জানলে অবাক হবেন

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৩ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৪, ৩ মার্চ ২০২৫

সবচেয়ে বেশি সরকারি ভাষাবিশিষ্ট দেশের নাম জানলে অবাক হবেন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে ৬,৫০০-এর বেশি ভাষা বিদ্যমান, তাই কোনো দেশের একাধিক সরকারি ভাষা থাকা অস্বাভাবিক নয়। সরকারি ভাষা হলো সেই ভাষা, যা কোনো দেশের রাজনীতি, সরকার এবং শিক্ষাব্যবস্থায় আইনি স্বীকৃতি পায় এবং বহুল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কিছু দেশের এতগুলো সরকারি ভাষা থাকার কারণ কী?

একাধিক সরকারি ভাষার প্রয়োজন কেন?
বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষের ঐক্য বজায় রাখার জন্য অনেক দেশ একাধিক ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেয়। এছাড়া ঐতিহাসিক ও স্থানীয় ভাষার প্রতি সম্মান এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগও বড় কারণ। আফ্রিকা, আমেরিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষা এখনও সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তবে একাধিক সরকারি ভাষা থাকা সব সময় সুবিধাজনক নয়। অনেক সময় সরকারি ভাষা জনগণের বেশিরভাগের মাতৃভাষা নয়, ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি তৈরি হয়। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ভুল অনুবাদে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সরকারি ভাষাবিশিষ্ট ৫টি দেশ:
১. জিম্বাবুয়ে: ২০১৩ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জিম্বাবুয়ে ১৬টি সরকারি ভাষার জন্য স্বীকৃতি পায়। শোনা, নেদেবেলে এবং ইংরেজি প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সংবিধান অনুযায়ী সব ভাষার সমান মর্যাদা থাকার কথা থাকলেও ইংরেজি প্রায়শই অর্থনৈতিক কারণে প্রধান হয়ে ওঠে।

২. ভারত: ১৯,৫০০-এর বেশি ভাষা ও উপভাষা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় সংবিধান মাত্র ১৮টি ভাষাকে আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। হিন্দি ও বাংলা সবচেয়ে প্রচলিত, আর ঔপনিবেশিক প্রভাব এবং বাণিজ্যের কারণে ইংরেজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩৫টি স্থানীয় ভাষার মধ্যে ১০টি সরকারিভাবে স্বীকৃত। জুলু, খোসা, আফ্রিকান্স এবং ইংরেজি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। দেশটির ভাষার বৈচিত্র্য তার ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বহুমুখিতাকে প্রতিফলিত করে।

৪. বলিভিয়া: বলিভিয়ার সংবিধান ৩৭টি ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। তবে বাস্তবে সরকারি নথিপত্র ও যোগাযোগে অন্তত দুটি ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক — একটি স্প্যানিশ এবং অন্যটি পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানীয় ভাষা। বলিভিয়ায় স্প্যানিশ সবচেয়ে প্রচলিত হলেও কেচুয়া ও আইমারা ভাষাও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সরকার স্থানীয় ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও প্রচারে কাজ করে, যাতে দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর ঐতিহ্য টিকে থাকে এবং তারা সমাজে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত হতে পারে।

৫. সিঙ্গাপুর: সিঙ্গাপুরে চারটি সরকারি ভাষা রয়েছে — ইংরেজি, মালয়, ম্যান্ডারিন চীনা এবং তামিল। বহুভাষিকতা সংরক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুরে সাইনবোর্ড ও শিক্ষাব্যবস্থায় একাধিক ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। যদিও সরকারি ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইংরেজির প্রাধান্য বেশি, ম্যান্ডারিন সবচেয়ে বেশি কথ্য ভাষা।

ভাষান্তরের চ্যালেঞ্জ
সরকারি ভাষা সবসময় দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা নয়। ফলে প্রশাসনিক যোগাযোগ, শিক্ষা ও জনসেবায় ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। এতে স্থানীয় ও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর তথ্য ও সেবার প্রাপ্যতায় বাধা সৃষ্টি হয়।

একাধিক সরকারি ভাষা পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হতে পারে, তবে এটি জাতীয় ঐক্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিটি ভাষা একটি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ, তাই এগুলোর সম্মান ও স্বীকৃতি সকল জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব ও মর্যাদা দিতে সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: https://ad-astrainc.com/blog/the-countries-with-the-most-official-languages-and-how-they-translate

আবীর

×