ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ মার্চ ২০২৫, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩১

রামরঙ্গন কমলা

রসালো ও ভিটামিনে  ভরপুর, দেশেই  চাষ হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস  

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১ মার্চ ২০২৫

রসালো ও ভিটামিনে  ভরপুর, দেশেই  চাষ হচ্ছে

.

কমলার নাম ‘রামরঙ্গন’। ভিটামিনে ভরপুর। বিশেষ জাতের বলেই এর নামটিও অদ্ভূত! ভারত ও চীনে এর ব্যাপক চাষ হয়। তবে, বাংলাদেশে যশোরের শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের ওহিদুজ্জামান রামরঙ্গনের চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। 
নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। টেলিভিশনে প্রতিবেদন দেখে রামরঙ্গন জাতের কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন ওহিদ। সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ রঙের ‘রামরঙ্গন’। সেই কমলা বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে। ফলন ভালো হওয়ায় এই জাতের কমলা চাষে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, এ এলাকার আবহাওয়া ও মাটি রামরঙ্গন কমলাসহ বিভিন্ন ফল চাষে উপযোগী। 
সামান্য কিছু পরিচর্যা করলেই চাষে সাফল্য আসে। রামরঙ্গন কমলা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় থেকে দুই মণ রামরঙ্গন কমলা পাওয়া সম্ভব। এই কমলা গাছ পাঁচ-ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি কমলার একটি ভ্যারাইটি জাত। এ জাতের কমলা চাষে সুবিধা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ পরিপক্ব হওয়ার পরও এটা গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। পরিপক্বের পরও ফলটি অন্তত এক মাস গাছে রাখা যায়। দুই বছরের মধ্যে এই গাছ ফলন দেয়।
ওহিদুজ্জামান জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই বিঘা জমি ১০ বছর মেয়াদে বর্গা নিয়ে ১৯৬টি রামরঙ্গন চায়না কমলার চারা রোপণ করেন। সেসময় তিনি ঠিকভাবে জানতেনও না গাছটিতে কেমন ফল হবে। প্রথম বছর কিছু ফল আসে। সেই ফল খুব সুস্বাদু হওয়ায় তাতে কলম বাঁধেন। পরে দুই বিঘা জমিতে ওই চারা লাগালে দ্বিতীয় বছর গাছ ফলে ভরে যায়। তিনি জানান, প্রথম বছর তার ফল বিক্রি হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তবে, এ বছর বাগানের ফল ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। এতে ওহিদুজ্জামান আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতানারা পারভীন সুমি বলেন, পানবুড়ি গ্রামে উদ্যোক্তা চাষি ওহিদুজ্জামান দুই বিঘা জমিতে কমলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গতবছর তার খরচ হয়েছিল ৫ হাজার টাকা, লাভ হয়েছিল ২ লাখ টাকা। চলতি বছর তিনি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন। আমরা কৃষি বিভাগ এই উদ্যোক্তা চাষির পাশে সব সময় আছি। বাগানটি সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিদর্শন করি। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। তিনি এ কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। 
কমলা ক্ষেতের শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ওহিদুজ্জামানের এই বাগানে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। তিনি আমাকে যে টাকা দেন তা দিয়ে আমার সংসার চলে। গত বছরের চেয়ে এবার অনেক ফল হয়েছে। লোকজন আসে এ বাগান দেখতে। 
দর্শনার্থী আকবার আলী বলেন, বাগানের পাশেই আমার বাড়ি। আমি আসছি ওহিদ ভাইয়ের বাগান দেখতে। ফলগুলো সুন্দর, দামও ভালো। কিছু চারা নিয়ে আমার জমিতে লাগাব, তাই পরামর্শ নিতে এসেছি। আরেক দর্শনার্থী ডা. মাসুদ রানা বলেন, আমি সাতক্ষীরা থেকে এসেছি জিসান নার্সারিতে ওহিদ ভাইয়ের বাগানটা দেখতে। বাগানের কমলালেবু দেখতে সুন্দর ও রসালো। আমার নিজের যে পরিত্যক্ত জমি আছে সেখানে এ ধরনের একটি বাগান করতে চাচ্ছি। ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিচ্ছি কীভাবে এমন বাগান করা যায়। 
তরুণ উদ্যোক্তা হিরণ আহমেদ বলেন, ওহিদ ভাইয়ের কমলাবাগান দেখে খুব ভালো লাগছে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমি চাচ্ছি নিজেই আমার জমিতে এমন একটি সুসজ্জিত বাগান তৈরি করতে। তাই ওহিদ ভাইয়ের বাগান দেখতে এসেছি।
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, এই উপজেলায় এ বছর পাঁচ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের ওহিদুজ্জামান দুই বিঘা জমিতে রামরঙ্গন কমলার চাষ করেছেন। এলাকার আবহাওয়া ও মাটি ভালো হওয়ায় বিভিন্ন দেশী-বিদেশী জাতের ফল চাষের জন্য উপযোগী। আগামী বছর কমলার আবাদ আরও বাড়বে। বাণিজ্যিকভাবে এটি আবাদ করা গেলে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

×