
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মহড়া করে আদমদের একটি অংশ
অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম শহর অ্যাডিলেডে চলছে অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যাল। নাটক, সংগীত, নৃত্যসহ শিল্পের বহুমাত্রিকতায় সজ্জিত এই উৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে আদম পাচারের পরিকল্পনা। ইতোপূর্বে বিদেশে কনসার্টে অংশগ্রহণ বা নৃত্য পরিবেশনার সূত্র ধরে আদম পাচারের ঘটনা অনেকেরই জানা। এবার সেই আদম পাচারের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো নিবেদিতপ্রাণ নাট্যকর্মীদের শ্রমে-ঘামে গড়া মঞ্চনাটক। অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে চলছে সেই মানবপাচারের অপতৎপরতা। নেওয়া হয়েছে আদম পাচারের অভিনব কৌশল। এই উৎসবে আগামী ২০ মার্চ বিভিন্ন নাট্যদলের মঞ্চশিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত নাট্যম রেপার্টরির ‘দমের মাদার’ নাটকটি মঞ্চায়নের কথা রয়েছে। মূলত এই প্রযোজনাটির প্রদর্শনী ঘিরেই সাজানো হয়েছে আদম পাচারের পরিকল্পনা। নাটকের মূল দলের সঙ্গে সুকৌশলে নাট্যকর্মী সাজিয়ে অতিরিক্ত জনবল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আর শুধু নাট্যকর্মী নয়, এই আদম পাচারের স্বার্থে নামসর্বস্ব চারটি নতুন সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে নাট্যম রেপার্টরি মিউজিক ট্র্যুপ, নাট্যম রেপার্টরি ডান্স ট্র্যুপ, নাট্যম রেপার্টরি মাইম ট্র্যুপ ও নাট্যম রেপার্টরি গম্ভীরা ট্র্যুপ। নাট্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি সদ্য গজিয়ে ওঠা এসব ট্র্যুপের সদস্যরাও ২০ মার্চ ফ্রিঞ্জ উৎসবে নাচ-গান ও নৃত্য পরিবেশন করবে। শিল্পীর ছদ্মবেশী এই আদমরা উৎসব শেষে রয়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়ায়। অনেকটা যেমন খুশি তেমন সাজো পদ্ধতির অনুসরণে তারা বনে গেছেন সংগীতশিল্পী, মূকাভিনয়শিল্পী, নৃত্যশিল্পী কিংবা গম্ভীরা গানের শিল্পী। শিল্পী ও অ-শিল্পী মিলিয়ে ৪০ জনের একটি বিশাল দল তৈরি করা হয়েছে ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভালে পাঠানোর জন্য। এই দলের মধ্যে মূল শিল্পী হিসেবে থাকছেন ১০ জন নাট্য ও সংস্কৃতিকর্মী, যারা উৎসব শেষে দেশে ফিরে আসবেন। বাকি ৩০ জন আদম উৎসব শেষে রয়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়ায়। তাদের ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়া চলছে। ভিসা পাওয়ার জন্য এই দলের অনেকেই ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা সেন্টারে আঙুলের ছাপসহ বায়োমেট্রিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।
মূল সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ৩০ আদমকে পাচারের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১৮ থেকে ২৮ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে শিল্পীর ছদ্মবেশী এই বিশাল দলকে সংগীত, নৃত্য, গম্ভীরা ও মূকাভিনয় রপ্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার মহড়াকক্ষে। সেসব মহড়ার ফটোশুট ও ধারণকৃত ভিডিও অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং সেগুলো আয়োজকদের ওয়েবসাইটে প্রচারও করা হয়েছে। ছদ্মবেশী এই শিল্পীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি অনেকের নজরে আসায় এবং সন্দেহ হওয়ায় পরবর্তীতে একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণের পালা গুটিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন নাট্যম রেপার্টরির প্রধান এবং শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (নাটক) ড. আইরিন পারভীন লোপাসহ মূল দলের শিল্পীরা। ওই প্রশিক্ষণের ছবি এসেছে জনকণ্ঠের হাতে। সেসব ছবিতে দেখা যায়, আদমদের নাচ-গান ও মূকাভিনয়ের কৌশল শেখাচ্ছেন লোপাসহ দশ সদস্যের মূল দলের কয়েকজন শিল্পী।
মূলত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী নাট্যকর্মী শাহীন মুরাদের যোগসাজশে এই মানব পাচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত বছরও তিনি একই উৎসবে মেঠোপথ নাট্যদলের ‘মলুয়ার উপাখ্যান’ নাটকের প্রদর্শনীর সুযোগে মানব পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন নাট্যম রেপার্টরির প্রধান এবং শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা ড. আইরিন পারভীন লোপা, মুন্সীগঞ্জের নাট্যদল থিয়েটার সার্কেলের শিশির রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে কর্মরত মনোহর চন্দ্র দাশসহ দশজনের একটি কোর টিম। শিল্পের আশ্রয়ে তারা গড়ে তুলেছেন আদম পাচারের যৌথ খামার। এই দলের বাকি সাত সদস্য হলেন জুনায়েদ ইউসুফ (নাট্যচক্র), রবিউল মাহমুদ ইয়াং (নাট্যচক্র), পরিমল (নাট্যচক্র), শুভাশীষ দত্ত তন্ময় (বিবেকানন্দ থিয়েটার), পারভিন পারু (প্রাচ্যনাট), লিটা খান (থিয়েটার) ও রাজিব (মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়)। এই দশজনের মধ্যে নাট্যচক্রের পরিমল বাদে বাকি নয়জনই দমের মাদার নাটকের শিল্পী ও কলাকুশলী। এই দলটির বিরুদ্ধে শিল্পের আড়ালে মানব পাচারের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই দলের আদম পাচারের পরিকল্পনাসহ তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ উল্লেখ করে মানব পাচার রোধে শিল্পকলা একাডেমির একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সৈয়দ জামিল ছাড়াও ওই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব, দুদকের মহাপরিচালক, মুন্সীগঞ্জের ডিসি, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি নাট্যদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর। ওই চিঠিতে আইরিন পারভীন লোপাকে ‘আদম গুরুমা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা ‘মুন্সীগঞ্জের সকল সচেতন নাট্যকর্মী’র ব্যানারে পাঠানো সেই চিঠির একটি কপি জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদকের কাছেও এসেছে। সেই চিঠির সূত্র ধরে চালানো অনুসন্ধানে বিদেশের মাটিতে শিল্প পরিবেশনার আড়ালে আদম পাচারের নানা তথ্য মিলেছে।
তবে আশার বিষয় হচ্ছে, শিল্পের ছদ্মবেশে আদম পাচারের এই এই পরিকল্পনা প্রতিরোধে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সে লক্ষ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
চিঠির সূত্রসহ প্রাপ্ত অনুসন্ধানে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভালে নাট্যম রেপার্টরির দমের মাদার নাটকের মঞ্চায়ন হবে আগামী ২০ মার্চ। আদম পাচারের সুবিধার্থে এই নাটকের নিয়মিত শিল্পীদের উৎসবের ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। বাদ পড়া শিল্পীরা নাম না প্রকাশের শর্তে তাদের নাটক থেকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে আদাম পাচারের অপতৎপরতার কথা বলেছেন। এদিকে একটি ছবিতে দেখা যায়, আদমদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের উদ্দেশ্যে বয়ান দিচ্ছেন লোপা। একইভাবে শুভাশীষ দত্ত তন্ময়কে মাইমের প্রশিক্ষণ এবং শিশির রহমানকে গানের প্রশিক্ষণ দিতে দেখা যায় ছবিতে।
ঘটনার সূত্র ধরে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের থিয়েটার সার্কেলের প্রধান শিশির রহমান দলের সদস্যদের ১০ লাখ টাকা দেওয়ার বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে করে দলের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন এবং অনেকেই দলত্যাগ করে বিষয়টি ঢাকার নাট্যকর্মীদের জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে থিয়েটার সার্কেলের দলত্যাগী সদস্য কামরুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিঞ্জ উৎসবে যাওয়ার জন্য দলের সদস্যদের কাছ ১০ লাখ টাকা করে দাবি করেন শিশির রহমান। তার এই অনৈতিক প্রস্তাবে আমাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এ ছাড়া আমাদের পক্ষে এত টাকা দেওয়াও সম্ভব নয়। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে শিশির রহমানের সঙ্গে বিরোধ হলে আমরা ছয় থেকে সাতজন সদস্য দল থেকে বেরিয়ে আসি। আমি ছাড়াও এই দলত্যাগীদের মধ্যে রয়েছেন আরিফ চৌধুরী, লোকনাথ দাশ, শিহাব প্রমুখ। পরবর্তীতে আমরা দল্যত্যাগীরা প্রজন্ম থিয়েটার নামে নতুন দল গড়ি। এই শিশির রহমান পূর্বে অনেক অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করেছেন। তিনি কখনোই দল পরিচালনার হিসাব কাউকে দেন না এবং সকলের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। এই ঘটনার পূর্বেও শিপ্রা দাশ, জাহাঙ্গীর আলম ঢালীসহ একঝাঁক নিবেদিত প্রাণ পুরোনো নাট্যকর্মী দলত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
এবার আদম পাচারের মিশন সফল করতে শিশির রহমান নাট্যম রেপার্টরির আইরিন পারভীন লোপার শরণাপন্ন হন। তিনি লুফে নেন এই লোভনীয় প্রস্তাব। তৈরি করা হয় নাট্যম রেপার্টরি মিউজিক ট্র্যুপ, নাট্যম রেপার্টরি ডান্স ট্র্যুপ, নাট্যম রেপাটরি মাইম ট্র্যুপ ও নাট্যম রেপার্টরি গম্ভীরা ট্র্যুপ। পূর্বে এই দলগুলোর কোনো অস্তিত্ব ছিল না এবং এসব দলের মঞ্চসম্মত কোনো পরিবেশনাও নেই বলে জানা যায়। এই দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আদম রয়েছে মাইম ট্র্যুপে। এই দলের সদস্যদের মুখে রং বসিয়ে এবং পোশাক পরিয়ে কৃতি মাইম শিল্পী হিসেবে দেখানো হয়েছে। একইভাবে সংগীত ও নৃত্যদলে যাদের যুক্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের কোনো দক্ষতা নেই। এই আদম সদস্যরা তাদের ফেসবুক পেজে নাট্যশালার মহড়ার ছবিগুলো শেয়ার করে সংগীত, মূকাভিনয়সহ শিল্পের নানা শাখার শিল্পী হিসেবে নিজেদের প্রচার করছেন। এমনকি ইস্রাফিল মাহমুদ নামের এক আদম নিজেকে শিল্পকলা একাডেমির কর্মী এবং নাট্যম রেপার্টরি শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। ইস্রাফিল তার প্রোফাইল পিকচারে মেকাপ ও মাইম শিল্পী শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের সঙ্গে শিল্পকলার নাট্যশালার মহড়ার ছবিটি ব্যবহার করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইস্রাফিলের সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। একইভাবে সে নাট্যম রেপার্টরির শিল্পীও নয়। শেখ মনির নামের আরেক আদম নিজেকে নাট্যম রেপার্টরির কর্মী দাবি করলেও তার সঙ্গে নাট্যমের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন দলের নিয়মিত শিল্পীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভালে আমন্ত্রিত দল বা শিল্পীকে সেখানে যাওয়ার যাওয়ার জন্য কোনো খরচ প্রদান করা হয় না। তাই উৎসবের আমন্ত্রিতদের নিজ খরচেই যেতে হয়। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া যাতায়াতের প্লেন ভাড়া, ভিসা প্রক্রিয়াকরণসহ জনপ্রতি প্রায় দুই লাখ টাকার খরচ বহন করতে হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আড়ালে অস্ট্রেলিয়ায় মানব পাচারের বিষয়ে কথা হয় শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এই সংক্রান্ত চিঠি আমরা পেয়েছি। এই পাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে আসায় বিষয়টি খুব সংবেদশীল পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই একাডেমির পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেহেতু একাডেমির কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাই অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা হবে। প্রমাণ ছাড়া আমরা একাডেমির কোনো স্টাফকে অভিযুক্ত করতে চাই না। একইভাবে প্রমাণ ছাড়া কাউকে সন্দেহ করতে চাই না। তাই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একাডেমির সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, পাচারের ঘটনার সঙ্গে একাডেমির কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা নিরূপণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে আইরিন পারভীন লোপা বলেন, আদম পাচারের বিষয়টি ভিত্তিহীন। কারণ, আমরা আদমদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি-এমন কোনো প্রমাণ নেই। তা ছাড়া রেপার্টরি দল হিসেবে আমাদের নিবন্ধন রয়েছে। আমরা নানা রকম ইভেন্ট করি। আমাদের আয়কর দিতে হয়। তাই অ্যাডিলেড ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালে নাচ, গান, গম্ভীরা ও মূকাভিনয় পরিবেশনার জন্য কয়েকজনের নাম দিয়ে প্রস্তাব পাঠাই। আর প্রস্তাব দিলেই যে আমন্ত্রণ পাবো তেমনও নয়। আর এই দলগুলোকে নতুন বলা হলেও এগুলো আগেই তৈরি করা হয়েছে। এখন এসব দল নিয়ে কেউ যদি অবান্তর মন্তব্য করে তাহলে আমার বলার কিছু নেই। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত ওই উৎসবের আমন্ত্রণপত্র আসেনি। ওই উৎসবে দমের মাদার নাটকের প্রদর্শনীর জন্য কেন নিয়মিত শিল্পীদের নেওয়া হয়নি-এই প্রশ্নের জবাবে লোপা বলেন, এখনো আমন্ত্রণপত্র না আসায় তাদের জানানো হয়নি। এই কারণেই তারা ভুল বুঝছে এবং মনগড়া ব্যাখা দিচ্ছে। ইমম্যাচিউরড বা পরিণত না হওয়ায় তারা ভেবেছে যে তাদের বাদ দিয়ে আমরা উৎসবে অংশ নিবো। ফলে আতঙ্কিত হয়ে তারাই মূন্সীগঞ্জের নাট্যকর্মীদের নামে আদম পাচারের অভিযোগ করে বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে আদমদের নিয়ে মহড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওখানে আসলে যে মহড়া হয়েছে সেটা ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভ্যালের জন্য নয়। বসুন্ধরা কনভেনশন সিটির নবরাত্রি হলের একটি অনুষ্ঠানের জন্য ওই মহড়া করেছিলাম। তাহলে ওই মহড়ার ছবিগুলো কেন উৎসবের ওয়েবসাইটে প্রচার করা হচ্ছে কিংবা আদমরা তাদের ফেসবুকে প্রচার করছে-এই প্রশ্নের জবাবে লোপা বলেন, তারা কেন এটা প্রচার করছে আমরা জানি না। তাছাড়া উৎসবের ওয়েবসাইটে ছবি দেওয়া মানেই যে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে যাচ্ছে, তাও নয়। উৎসবে যাওয়ার জন্য সদস্যদের কাছ থেকে জনপ্রতি দশ লাখ টাকা চাওয়ার প্রস্তাব প্রসঙ্গে শিশির বলেন, এসব বিষয় নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থিয়েটার সার্কেলের কারো সাথেই কোনো কথা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। দলত্যাগী সদস্য কামরুল হাসানের কাছ থেকে টাকা চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার সঙ্গে আসলে এমন কিছু হয়নি। তারা কেউ দল ত্যাগ করেও চলে যায়নি। সবাই আমাদের দলেই কাজ করছেন। এছাড়া এবার এই উৎসবের ব্যাপারে লোপা আপাই আমাকে অবগত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, গত বছর যেহেতু আমি উৎসবে অংশ নেই তাই তিনি এবারও আমার নাম দিয়েছেন। গত বছর আমি মেঠোপথ নাট্যদলের ‘মলুয়ার উপাখ্যান’। পালা’ নাটকের শিল্পী হিসেবে অংশ নিয়েছিলাম।
গত বছর ফ্রিঞ্জ উৎসবে ‘মলুয়ার উপাখ্যান’ মঞ্চায়নের আড়ালেও আদম পাচারের অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, ওই উৎসবে মঞ্চস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একই চিত্রনাট্যে ‘মলুয়া’ নামে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন অভিনেত্রী ও নির্দেশক জয়িতা মহলানবীশ। কিন্তু ফ্রিঞ্জ ফেষ্টিভ্যালে গিয়ে নাটকটির নির্দেশক বনে যান ওই নাটকেরই আরেক শিল্পী ও মেঠোপথ নাট্যদলের প্রধান শামীমা আক্তার মুক্তা।