
শেষ হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা
অমর একুশে বইমেলা শেষ হলো। এবারের প্রেক্ষাপটে ‘শেষ’ কথাটির নানা ব্যাখ্যা হতে পারে। সমাপনী দিনে শুক্রবার কেউ কেউ সেসব ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। সেদিকে না যাই। প্রচলিত অর্থেই বলি, ২৮তম দিনে শুক্রবার পরিসমাপ্তি ঘটেছে অমর একুশে বইমেলার। শেষ দিনে সাধারণত লেখক পাঠক প্রকাশকের মনে একটা চিনচিনে ব্যথা হয়। বিষাদ কাজ করে ভেতরে। কিন্তু এবার প্রাণের মেলার প্রাণে অসংখ্য আলপিন পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। অযুত ঘটনায় দুর্ঘটনায় ম্লান হয়েছে আয়োজনটি। বিতর্কিত হয়েছে। পাঠকের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বই বিক্রি নেমে এসেছিল অর্ধেকে। তার চেয়ে বড় কথা, অমর একুশের ইতিহাস আবেগ ভাবগাম্ভীর্য কোনো কিছুর দিকেই দৃষ্টি দিতে পারেননি আয়োজকরা। উল্টো একুশের মেলায় বিচিত্র ‘মলম’ বিক্রির মানসিকতা লক্ষ্য করা গেছে। অপব্যবহার, অব্যবস্থাপনা, নতজানু নীতি বইমেলার বহু বছরের গৌরবকে বিনষ্ট করেছে। ‘মেলা শেষ’ কথাটির অর্থ তাই একেকজন একেকভাবে নিয়েছেন।
২৮তম দিনে শুক্রবার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে একাডেমি কিছু অভিযোগের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেছেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল এবারের বইমেলায়। সেসব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে বইমেলা শেষ হতে যাচ্ছে আজ (গতকাল)।’
তার আগে সমাপনী দিনের প্রথমভাগটা ছিল পূর্ব নির্ধারিত শিশুপ্রহর। বেলা ১১টায় আলাদা করে খুদে পাঠকদের জন্য মেলার দ্বার খুলে দেওয়া হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিভাবকের সঙ্গে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা এসেছিল। লম্বা সময় শিশু চত্বর ঘুরে বেড়িয়েছে তারা। বই হাতে নিয়েছে। দেখেছে। কিনেছেও। বেলা ৩টার পর থেকে মেলায় সব বয়সী মানুষের আগমন ঘটতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে ভালো ভিড় চোখে পড়ে। শেষদিন বিবেচনায় যেমন বিক্রি হওয়ার কথা, প্রকাশকরা জানিয়েছেন, অতটা হয়নি।
ফলে সব মিলিয়ে এবারের মেলা তাদের হতাশ করেছে। শুরুটা নানা শঙ্কা সংশয় নিয়ে হয়েছিল। শেষটা হয়েছে হতাশায়।
নতুন বই কমেছে ॥ প্রতি বছর বইমেলা চলাকালীন বিপুল পরিমাণ নতুন বই প্রকাশিত হয়। এবার এ ক্ষেত্রেও পিছিয়ে ছিল মেলা। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন জানিয়েছেন, ২৮ দিনের মেলায় মোট ৩ হাজার ২৯৯টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গত বছর ২০২৪ সালে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৩ হাজার ৭৫১টি। তার আগের বছর ২০২৩ সালে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছিল ৩ হাজার ৭৩০টি।
বই বিক্রি অর্ধেকে ॥ বিভিন্ন সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, এবারের মেলায় বই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রকাশকরা প্রকাশ্যে বারবারই বলেছেন, বই বিক্রি হচ্ছে না। খুব কম। বিগত বছরের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে তারা জানিয়েছেন, এবার কারও বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে। কারও অবস্থা আরও খারাপ। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান থেকে আয়োজক বাংলা একাডেমিও বিক্রি কম হওয়ার তথ্যটি এক রকম স্বীকার করে নিয়েছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বিক্রির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বইমেলা নিছক বই বিকিকিনির হাট নয়। বইমেলা আজ আমাদের সংস্কৃতির অংশ-চেতনার অংশ।’ অবশ্য একাডেমির বই বিক্রির তথ্য দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, বাংলা একাডেমি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে।