ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

জনকণ্ঠ ফিচার

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

অমর একুশে বইমেলার শেষ বেলায় দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত মাস ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের এই ঢাকা শহরেই রচিত হয়েছিল মহা ইতিহাস। মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায়ে হাতের মুঠায় প্রাণ নিয়েছিল ছাত্রসমাজ। বর্বর পাকিস্তানিদের বন্দুকের সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বের করা ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালাতে দুইবার ভাবেনি হায়েনার দল। নিষ্ঠুর বুলেটে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন বরকত রফিক শফিক সালাম জব্বারসহ অনেকেই।

তাদের রক্তেই নতুন প্রাণ পেয়েছিল ‘আ মরি বাংলা ভাষা।’ ২১ ফেব্রুয়ারি তাই অমর একুশে। এই বায়ান্নর রক্তবীজ থেকেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পাওয়া। ফলে, জাতীয় জীবনে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য অপরিসীম। অবশ্য এই বইয়ের ভাষায় কথা বলে আর হয়তো লাভ হবে না। সময়টা কেমন যেন বদলে গেছে।

ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যের কথা, একুশের চেতনার কথা লেখায় বক্তৃতায় বারবার আমরা বলছি বটে। বাস্তব জীবনে এর কিছুই ধারণ করছি না। ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিফলন শূন্য। বর্তমান সময়টার কথাই যদি ধরি, কী সব ঘটনা ঘটে চলেছে দেশে! এসবের সঙ্গে একুশের চেতনার কোনো মিল কি আছে? শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার নামে ধাক্কাধাক্কি, ফুল দেওয়ার নামে পায়ে ফুল পিষে ফেলা এবারও তো দেখা গেল রাজধানী শহরে।

বাইরে থেকেও শহীদ মিনার ভাঙা এবং নানাভাবে অমর্যাদা করার খবর এসেছে। আসলে ইতিহাস থেকে বিচ্যুত জাতি খুব বেশি দূর যেতে পারে না। মুখ থুবড়ে পরে। আমরা ঠিক কোন্ পর্যায়ে আছি এখন? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আসুন। তা না হলে শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে কিছু অর্জন করা যাবে না। 
আজ শেষ একুশে বইমেলা ॥ আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে অমর একুশে বইমেলাও। মাসব্যাপী আয়োজন মাসের প্রথমদিন শুরু হয়েছিল। রীতি অনুযায়ী মাসের শেষদিন আয়োজনটির পরিসমাপ্তি ঘটছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে ধারণ করার কারণে এই মেলা ঘিরে বাড়তি আবেগ কাজ করে। ঢাকার শিক্ষিত সচেতন নাগরিক সমাজ বইমেলা ঘিরে চমৎকার একটি সময় কাটায়। তারা পছন্দের বই খুঁজেন। কেনেন।

লেখক পাঠক প্রকাশকদের জন্য এটি হয়ে ওঠে দারুণ এক মিলনমেলা। বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে এই সময়টাতে। তবে এবারের মেলা গোলমেলে ছিল বলতে হবে। প্রাণের মেলার প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অযুত অভিযোগ। অব্যবস্থাপনা। এসবের মধ্য দিয়ে এক একটি দিন পার করেছে। বইয়ের মেলায় বই ছাড়া বিপরীত সব কিছুর প্রচার চলেছে।

একুশের মেলায় একুশের সেই ভাবগাম্ভীর্য দেখা যায়নি। অন্য হাজারটা ইস্যু দিয়ে মূল ভাব নষ্ট করা হয়েছে। আলমগীর রুমি নামের এক তরুণ প্রকাশকের মেলা শেষের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরলে বিষয়টা কম কথায় ভালো বোঝা যাবে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘বইমেলায় এখনও চুরি হয়নি, তবে বইমেলাটা চুরি হয়ে গেছে।’ আরেকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিচিত্র বার্তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল নোটিসবোর্ড।

পালক পাবলিশার্স নামের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটি নোটিসে লিখেছে, ‘এখানে শাড়ি/ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচিং করে বই বিক্রি করা হয়!’ এখানে মূলত বই বিক্রি না হওয়ার হতাশা। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী এবারের বইমেলায় বই বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে, নানা খেদ ক্ষোভ অপ্রাপ্তি নিয়েই যে মেলা শেষ হচ্ছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য বই প্রকাশ থামছে না। ২৭তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭৬টি।

সমাপনী দিনটি অবশ্য শুক্রবার। মানে, ছুটির দিন। আজ মেলা শুরু হবে বেলা ১১টা থেকে। ১ টা পর্যন্ত চলবে শিশুপ্রহর। শিশুদের নিয়ে একবার অন্তত যান। বইয়ের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিন। তা না হলে ওদের এবং দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, যার আভাস এখন বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। না, সমাপনী দিন বাড়তি আনুষ্ঠানিকতা নেই।

এদিন মেলা মঞ্চে এক মাসের কার্যক্রমের ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলার সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রকাশকদের পুরস্কারও প্রদান করা হবে।

×