
খুব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চীনের প্রাচীর কাছ থেকে দেখার। আমার ইচ্ছা পূরণ হতে যাচ্ছে! আমি রাজিব পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তাই ব্যবসার কাজে বিভিন্ন দেশে যেতে হয় আমাকে। ভালো লাগে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে। সেই সব দেশের খাবারসহ নানান কিছুর অভিজ্ঞতা নিতে। গত ২৫ অক্টোবর চায়নার গুয়াংজু যাই ব্যবসার কাজে। ৭ দিন কাজ শেষ করে সকাল সকাল ট্যাক্সি নিয়ে ছুটলাম চীনের প্রাচীর দেখার উদ্দেশ্যে বেইজিংয়ের দিকে। বেইজিংয়ে তখন ঠান্ডা, ১০ ডিগ্রি সে। রাতে তাপমাত্রা আরও অনেক কমে যায়। শহর থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগবে সেখানে পৌঁছাতে। পথে যেতে দেখলাম বিশাল বিশাল পাহাড়। আমরা মুটিয়ানু পয়েন্টে গিয়েছিলাম। ড্রাইভারকে বলায় উনি আমাদের ক্যাবল কারের টিকেট পয়েন্টে নিয়ে যায়। সেন্টার পয়েন্টে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয় সেখানে। প্রাচীরের উপরে দুইভাবে উঠতে পারবেন। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে অথবা আলাদা টিকিট কেটে ক্যাবল কার দিয়ে। জনপ্রতি খরচ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৫০০ টাকা, যা চীনের কারেন্সীতে ১৪০ ইউয়ান অথবা আরএমবি। আমার স্ত্রী আফনান আর আমি ক্যাবল কারে চরে খুব অল্প সময়ে উপরে চলে গেলাম। নেমে যখন কাছে থেকে প্রাচীর দেখলাম, দুইজনই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম! কিভাবে সম্ভব এটা বানানো! কি অসম্ভব সুন্দর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব তৈরি স্থাপত্য!
স্থানীয় একজন গাইডের কাছ থেকে টুকটাক জেনে নিলাম প্রাচীর সম্পর্কে। এর উচ্চতা প্রায় ৫-৮ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৮৮৫১.৮ কিলোমিটার। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিস্টীয় ১৬শ’ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য এ প্রাচীর তৈরি শুরু করা হয়। এর মূল অংশের নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে। নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন চৈনিক বা চাইনিজরা কিন সাম্রাজ্যের সময়। চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং শত্রুর হাত থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ করে নির্মাণ করেছিলেন এটি।
বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় এই প্রাচীর দেখার জন্য। উপরে একটা কফিশপও আছে, সেখানে গরম কফির সঙ্গে সুভিনিয়রও পাওয়া যায়। এত উপরে বাতাসে খুব ঠান্ডা অনুভব করছিলাম। আমরা প্রায় ৫ ঘণ্টা অবস্থান করেছিলাম সেখানে। হেঁটে হেঁটে দেখেছি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিকেলে যখন সূর্য ডুবতে শুরু করেছে, সেই দৃশ্য সারাজীবন মনে রাখার মতো। মনে হচ্ছিল আরও সময় থাকি। কিন্তু ফিরতে তো হবেই। আসার আগে চীনের প্রাচীরের একটা শোপিস কিনে নেই স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে। সেখানে কর্মরত সবাই ছিল খুব আন্তরিক।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ চায়নায় ঘুরতে অথবা ব্যবসার কাজে যায়। তারা চাইলেই চীনের প্রাচীর ঘুরে দেখে আসতে পারেন। এক কথায় ‘গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’ ট্যুর আমার সারাজীবন মনে থাকবে।