ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

রোজার প্রস্তুতি

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ২১:১৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রোজার প্রস্তুতি

আসছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলিম একটু বেশি ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকার চেষ্টা করেন। কারণ এ মাসের প্রতিটা ইবাদতের রয়েছে দ্বিগুণ নেকি। কিন্তু এ মাসেই সবার ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেক। বিশেষ করে ঘরের মেয়েদের বাড়তি রান্না, ইফতার, ঘরের কাজ ইত্যাদি। আর যারা চাকরি করেন তাদের জন্য আরও কঠিন। সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে শীতের আমেজ। অনেক বাসাতেই এখনো উঠানো হয়নি শীতের পোশাক, লেপ, কম্বল। শীতের সেসব পোশাক ধুয়ে বা রোদে দিয়ে সেগুলো গুছানো আরেকটা বাড়তি কাজ। পরিকল্পনা করে একটু গুছিয়ে শুরু করে দিন প্রস্তুতি। সময় খুবই কম।
তালিকা তৈরি করা: এখনো যাদের গুছানো হয়নি তারা ঝটপট আগে তালিকা তৈরি করে নিন। খেজুর, ছোলা, ডাল, বেসন, তেল, চিনি ইত্যাদি যা যা লাগবে, আর কি পরিমাণ লাগবে তার আনুমানিক একটি তালিকা করুন। ছেলেদের কাজ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব সব বাজার করে ফেলা।
কিছু ইফতারের পূর্ব প্রস্তুতি: কিছু ইফতার আইটেম আছে যা আগে থেকে তৈরি করে নিলে রোজায় ঝামেলা অনেকটা কমে যায়। যেমন- ছোলা: লবণ ও মসলা দিয়ে বেশি করে সেদ্ধ করে ডিপে রেখে দিতে পারেন। ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে বের করে রেখে শেষ সময়ে শুধু তেল-পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে নিলেই হবে। এভাবে বিভিন্ন রকম কাটলেট, ডিম চপ ইত্যাদি তৈরি করা, ডাল বেটে রাখা, ফুলকপি, গাজর, ধনে পাতাসহ বিভিন্ন সবজি সুবিধামতো শেপে কেটে লবণ দিয়ে ভাপ দিয়ে ডিপে রাখতে পারেন। পরে তা দিয়ে পাকোড়া, ভেজিটেবল ও বিভিন্ন রকম ইফতার আইটেম ঝটপট তৈরি করে নিতে পারবেন।
ঘরের টুকিটাকি: রোজার আগে ইফতার প্রস্তুতি ছাড়াও ঘর পরিষ্কারে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি। প্রথমেই ঘর ঝাড়ার কাজটা করে নিবেন। এরপর ধোয়ার কাজে হাত দেবেন। জায়নামাজ, অবশিষ্ট শীতের কাপড়, নামাজের জন্য রাখা আলাদা কাপড়, সোফা ও জানালার পর্দা ইত্যাদি ধুয়ে নিতে পারেন। তাহলে সারাদিন রোজা রেখে ভারি কাজের কষ্টটা কম হবে।
কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দিন: একাই সব কাজের দায়িত্ব নেবেন না। ছোট বড় সবাইকে কাজ ভাগ করে দেবেন। আজ ইফতারে, রাতে ও সেহরিতে কি রান্না হবে তা সকালেই ঠিক করে নিন। ছোটদের কারো ওপর দায়িত্ব দিয়ে রাখবেন ফ্রিজ থেকে সবকিছু সময়মতো বের করে রাখার। এতে আপনি একটু বেশি সময় ইবাদতও করতে পারবেন। কাটাকুটি করতে পারে এমন কাউকে কাটার দায়িত্ব দিয়ে রাখুন। ছেলেদের দায়িত্ব দিতে পারেন ফল কাটা, শরবত বানানো ও ইফতার মাখানো বা রেডি করা। ইফতারের পর সবাই যার যার প্লেট-বাটি-গ্লাস ধুয়ে ফেললে একজনের ওপর কাজের দায়িত্ব অনেক কমে যাবে। কষ্টও কম হবে।
চাকরিজীবীদের জন্য: ইদানীং অনেক পরিবারেই দুজন সদস্য থাকেন আর দুজনেই চাকরিজীবী। তারা সেহরির সঙ্গে সঙ্গে ইফতার ও রাতের খাবার কি হবে তা ঠিক করে ডিপ থেকে সেগুলো বের করে নরমাল ফ্রিজে রেখে যেতে পারেন। ফলে বিকেলে ঘরে ফিরে আপনার কাজ অনেকখানি এগিয়ে থাকবে। দুজনে মিলে ভাগ করে কাজ করলে দেখবেন সবকিছু খুব সহজে ও অল্প কষ্টে সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে কাজ অবশ্যই আগে থেকে ভাগ করে নেবেন। তাহলে ‘এই কাজটা ও করে নিবে’- এই ভাবনায় কাজে ঝামেলা লাগবে না, আর এ নিয়ে দুজনের ভুল বুঝাবুঝিও হবে না। মনে রাখবেন, রোজার দিনে বেলা শেষে সবারই একটু মাথা গরম থাকে।
ঈদের শপিং: সুযোগে ঈদের শপিংও অনেকটা এগিয়ে রাখবেন। তাহলে রোজা রেখে মার্কেটে দৌড়ে অযথা হয়রানি ও কষ্টের মুখোমুখি হতে হবে না। অল্প কিছু শপিং থাকলে তাতে রোজায় শপিংয়ের ইমেজটাও যেমন পাওয়া যায়, তেমনি কষ্টও কম হয়।
মায়েদের জন্য: ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত গৃহিণী মায়েরা মনোকষ্টে থাকেন ভালো করে কাজ ও ইবাদত কোনোটাই করতে পারেন না বলে। মনে রাখবেন- বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো, দুধ খাওয়ানো, ন্যাপি পরিষ্কার করা, কান্নায় আদর দেওয়া, রাতে জেগে থাকা- সব কিছুই ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। নিজেদের বাস্তবতা এবং পরিস্থিতি বুঝে পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করবেন রমজানের আগেই। কখনোই অন্যের সঙ্গে নিজের বাস্তবতা তুলনা করে হতাশ হবেন না, সবার বাস্তবতা ভিন্ন। আর সবশেষে একটা পরামর্শ- পথে যানজটে আটকে থাকলে আর ইফতারের সময় বেশি এগিয়ে আসলে অবশ্যই ফোন দিয়ে বাড়ির সদস্যদের জানাবেন আপনার অবস্থান। এতে করে পরিবারের সদস্যরা টেনশনমুক্ত থাকবে আর আপনার জন্য রেখে দেওয়া কাজগুলো তারা ভাগ করে নিয়ে নেবে।

×