
.
অমর একুশে বইমেলাকে বলা হয় প্রাণের মেলা। সেই প্রাণ কি এবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? লেখক, পাঠক, প্রকাশকের উপস্থিতি কতটা সন্তোষজনক? আর বই বিক্রি? কোন পর্যায়ে আছে? অযুত প্রশ্ন সামনে রেখেই শেষ সপ্তাহে পড়েছে মেলা। ২৮ দিনের মেলার ২২ দিন ইতোমধ্যে গত হয়েছে। যে ক’দিন বাকি, চোখের পলকে ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত খ্যাতিমান অনেক লেখক কবি-সাহিত্যিকের পা পড়েনি প্রিয় প্রাঙ্গণে। দেশের প্রকাশনা শিল্পে কয়েক দশক ধরে ভূমিকা রেখে চলা প্রকাশকরা বড় সংখ্যায় অনুপস্থিত। ধ্রুপদী সাহিত্য মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য বিজ্ঞান দর্শন শিল্পকলা বিষয়ক বইয়ের পাঠক, সব দেখে মনে হচ্ছে, কম আসছেন মেলায়। জ্ঞাননির্ভর ও সৃজনশীল বই যারা প্রকাশ করেন তাদের স্টল প্যাভিলিয়নে আগের মতো ভিড় চোখে পড়ছে না। অথচ অমর একুশে বইমেলার চরিত্র বৈশিষ্ট্য গড়ে দেওয়ার মূল কাজ এই অংশটিই এত বছর ধরে করে আসছে। এবার ছন্দপতন। অনেক ক্ষেত্রেই তাল কেটে যাচ্ছে। সুর ঠিকমতো লাগছে না। অমর একুশের দিনটির কথাই যদি বলি, আগের সেই ভাবগাম্ভীর্য এবার দেখা যায়নি। ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসটিকে কেউ কেউ পুরোপুরি ভুলে ছিলেন। কেউ কেউ আবার নিজের মতো করে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন।
২২তম দিনে অবশ্য একুশের কোনো রেশ মেলায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। দিনটি মেলার শেষ শনিবার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় দুপুরের আগেই। ওই সময়টা ছিল শিশুদের। ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন পিতামাতা এবং অভিভাবকরা। শিশু চত্বরে খেলাধুলা করে, বই দেখে কিনে সময় কাটিয়েছে তারা। বিকেলের দিকে সব বয়সী মানুষের আগমন ঘটতে থাকে। ঘুরে বেড়ানোর লোক তো ছিলই। বই কিনতেও দেখা গেছে।
প্রকাশকরা বলছেন, বই সংগ্রহ করতে চাইলে, এখনই সময়। কারণ বেশিরভাগ নতুন বই মেলায় চলে এসেছে। যারা প্রকৃত পাঠক সময়টা এখন তাদের। শেষ সপ্তাহে ঘোরাঘুরি কমিয়ে সবাই বই কেনায় মনোযোগী হবেন, আশা করছেন প্রকাশকরা।
১৪৪ নতুন বই ॥ ২২তম দিনে মেলায় ১৪৪টি নতুন বই এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কায়কোবাদের সাহিত্যে ‘শ্মশানে’র চিত্রাবলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আবু দায়েন।
প্রাবন্ধিক বলেন, কায়কোবাদ স্বশিক্ষিত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। কবি হিসেবে কায়কোবাদের আবির্ভাব তখন, যখন বাংলার সাহিত্য-ধারা হিসেবে কাহিনীকাব্যের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কবি হিসেবে কায়কোবাদ নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘পুরাতন’ পথের পথিক হিসেবেই। কায়কোবাদ কাহিনীনির্ভর কবি। তাঁর প্রায় সব কবিতা ও কাব্যই কাহিনীর আশ্রয়ে শিল্পিত হয়। তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও কাব্যকাহিনীর ভাব ও বিষয়বস্তু গাঁথা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতীকী শব্দের সাহায্যে।
আলোচক বলেন, কবি কায়কোবাদের মধ্যে খুব অল্প বয়সেই স্বদেশ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি কেবল কাহিনীভিত্তিক কাব্যেরই কবি নন, গীতিকাব্যেরও কবি। দেশপ্রেমের যথার্থ আবেগ এবং অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য বেদনাবোধ ছিল কায়কোবাদের সমাজসচেতন মনের পরিচয়। তিনি আন্তরিকভাবে হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা করেছিলেন। গীতি কবিতার জন্য কায়কোবাদ বাংলা সাহিত্যজগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।