
ছবি: সংগৃহীত
কফি ও চা বিশ্বের দুই প্রধান পানীয়। প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ এই দুই পানীয় পান করে থাকে। কেউ কেউ কফির তিক্ত স্বাদ বেশি পছন্দ করেন, আবার কেউ কেউ চায়ের হালকা সুবাসে আকৃষ্ট হন।
যদিও এই পছন্দ স্বাদগ্রন্থি, ঘ্রাণ এবং মনস্তাত্ত্বিক ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দেখাচ্ছে যে এখানে জিনের প্রভাব রয়েছে।
মানুষের জিহ্বা পাঁচটি মৌলিক ধরনের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে: মিষ্টতা, লবণাক্ততা, টক, তেতো এবং উমামি। এর মধ্যে কফির তিক্ততা অনুভব করার কাজ নির্দিষ্ট কিছু জিনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, চায়ের হালকা স্বাদ গ্রহণের কাজ করে অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর, যা মূলত আমাদের ঘ্রাণ নিতে সহায়তা করে। এই রিসেপ্টরগুলো কতটুকু সংবেদনশীল হবে, তা-ও নির্ধারণ করে আমাদের শরীরের জিন।
স্বাদগ্রহণে প্রধান ভূমিকা পালন করে TAS2R (Taste receptor type 2) টাইপের জিন। এই জিনগুলো মূলত তিক্ত স্বাদ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, TAS2R43 জিন ক্যাফেইনের তিক্ততা শনাক্ত করতে সহায়তা করে। যাদের শরীরে এই জিনের নির্দিষ্ট রূপ আছে, তারা ক্যাফেইনের তেতো স্বাদ বেশি অনুভব করেন। ফলে কফির প্রতি তাদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এছাড়া, CYP1A2 নামক জিন ক্যাফেইন হজম করতে সহায়তা করে। এই জিনের কার্যক্ষমতা অনেকের বেশি, আবার অনেকের কম হয়। যাদের শরীরে এই জিনের প্রভাব বেশি, তারা দ্রুত ক্যাফেইন হজম করতে পারেন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি কফি পান করে থাকেন। এছাড়া, কফি পান করলে অনেকের শরীরে ডোপামিন নিঃসরণ হয়, যা জিনগত কারণেই ঘটে। ফলে তারা কফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন।
OR6A2 নামক জিন চায়ের নির্দিষ্ট গন্ধ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে এই জিন বেশি সংবেদনশীল, তারা সাধারণত চায়ের সূক্ষ্ম সুবাসকে বেশি উপভোগ করেন। এছাড়া, চায়ে ক্যাটেচিনস এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে। যাদের দেহে TAS2R16 জিন বেশি কার্যকর, তারা এ দুটো উপাদানের স্বাদ বেশি পান। ফলে তারা চা পান করতেও বেশি পছন্দ করেন।
কাজেই, এরপর কেউ যদি আপনাকে বেশি চা বা কফি পানের জন্য দোষারোপ করে, তাদের বলে দিন যে এটি আসলে আপনার জিনের দোষ।
শিলা ইসলাম