
.
যথাযোগ্য মর্যাদা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুক্রবার দেশের বিভিন্নস্থান ও প্রতিষ্ঠানে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাইলস্টোন কলেজ, বাংলাদেশ পরমাণু শুক্তি কমিশন ও বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। -খবর বিজ্ঞপ্তি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই দিবস উদ্যাপিত হয়।
শুক্রবার একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা অতিথিদের স্বাগত জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। এ সময় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, যুগ্ম সমন্বয়কারী বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেলিম রেজা এবং সদস্য-সচিব প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথকভাবে শহীদ বেদিতে পু®পস্তবক অর্পণ করে মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যবৃন্দ, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শহীদ বেদিতে পু®পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ শুক্রবার সকাল ৬:৩০টায় ‘স্মৃতি চিরন্তন’ চত্বর থেকে মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরি বের করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এতে নেতৃত্ব দেন। মৌন মিছিল ও প্রভাতফেরিটি উদয়ন স্কুল হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গমন করে। পরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, রেজিস্ট্রার, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, সকল অনুষদের ডিন, হল ও হোস্টোলসমূহের প্রাধ্যক্ষ ও ওয়ার্ডেন, প্রক্টর, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ইনন্সিটিউটের পরিচালক, অফিস প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করেন।
এ ছাড়া, বাদআছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়াসহ সকল হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
মাইলস্টোন কলেজ ॥ ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ‘অমর একুশে’-শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাইলস্টোন কলেজ এবং মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুল।
ভাষা আন্দোলনের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে ছিল-প্রভাত ফেরি, কালোব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন, শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণী। এ উপলক্ষে দিনের প্রথম প্রভাতে মাইলস্টোন কলেজ এবং মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ প্রভাতফেরি। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’ অমর গানের সুর ছড়ানো প্রভাত ফেরিটি উত্তরার বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। এসময় বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে শহীদ মিনারের বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম, উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, মাইলস্টোন প্রিপারেটরি কেজি স্কুলের নির্বাহী অধ্যক্ষ মিসেস রিফাত নবী আলম এবং স্কুলটির ডিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন মো. জাহাঙ্গীর আলম খান (অব.)। এ ছাড়া মাইলস্টোন কলেজ ও স্কুলের সকল উপাধ্যক্ষগণ, পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ডিয়াবাড়ি ক্যাম্পাসের শহীদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাবীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজনের শেষাংশে ছিলো পুরস্কার বিতরণী পর্ব যেখানে অমর একুশে ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ॥ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ০৮:০০টায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমশিনের চেয়ারম্যান ড. মো. কামরুল হুদার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনে কমিশনের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধান, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-র্কমচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কমিশনের চেয়াম্যান মহোদয় ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৫’ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে স্থাপিত কমিশনের স্টল পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ॥ বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উদযাপন করা হয়। দিনের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী, এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ডিনবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসমেত একটি প্রতিনিধিদল প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার পল্লবী, মিরপুর-১২ এর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোকে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ের ওপর বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বর্ণা দত্ত বক্তব্য প্রদান করেন। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। সেইসঙ্গে তিনি জুলাই-২০২৪ গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী শিক্ষার্থী, শিশু ও অন্যদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সকল ক্ষেত্রে শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে এবং বাংলা ভাষা রক্ষা, দেশ-বিদেশে প্রসার ও চিরঞ্জিবতা প্রদানে সকলকে সচেষ্ট হওয়ার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালচারাল ক্লাব কর্তৃক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সবশেষে, ভাষা শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা, বাংলা ভাষার সার্বজনীন ব্যবহার এবং দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।