
বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলায় বইয়ে নিমগ্ন পাঠক
একটু অন্যরকম সময়। দেদার স্বপ্ন যেমন দেখা হচ্ছে, তেমনি আছে অনিশ্চয়তাও। সংস্কার কতদূর হলো? নির্বাচন কবে? এই প্রশ্নগুলো দিন দিন জরুরি হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের জীবন-জীবিকা নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়েও কম কথা হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকার সচেতন নাগরিক সমাজ সবকিছুর সুন্দর সমাধান চান।
তাদের নিত্যদিনের আলোচনা থেকে আড্ডা গল্প থেকে এটি পরিষ্কার। আজ অমর একুশের দিনে বায়ান্নর অবিনাশী চেতনাকে সঙ্গী করে সামনে এগিয়ে যেতে চান সবাই। অমর একুশে বইমেলা থেকেও অভিন্ন উচ্চারণ কানে এসেছে। একদিন আগে বৃহস্পতিবার অনেকেই মেলায় এসেছিলেন কালো পোশাক পরিধান করে। কালো রঙে বায়ান্নর শোক।
সেইসঙ্গে মায়ের ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করার গর্ব ছিল পাঠকের চোখেমুখে। তবে মেলা ২১ ফেব্রুয়ারির আবেগকে কতটা ধারণ করতে পেরেছে তা নিয়ে কথা হতে পারে। ভাষা আন্দোলনের স্মারকগুলোকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা মেলায়, বলা চলে, অনুপস্থিত। তবে একুশের অমর স্মৃতি, ইতিহাস তুলে ধরে অনেক বই লেখা হয়েছে। সেসব বই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশকরা নিজ নিজ স্টল বা প্যাভিলিয়নে গুরুত্ব সহকারে বইগুলো প্রদর্শন করছেন।
অমর একুশের দিনটির জন্য মেলা সংশ্লিষ্টরা বরাবরের মতো অপেক্ষাও করছিলেন। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে আজ। আজ মেলায় প্রচুর বই বিক্রি হবে বলেও আশা করা হচ্ছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার একদিনেই নতুন বই এসেছে ১১২টি। আজ মেলা শুরু হবে সকাল ৭টায়। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সরাসরি প্রবেশ করা যাবে প্রাণের মেলায়।
একুশের বক্তৃতা আজ ॥ বইমেলার মূলমঞ্চে আজ অনুষ্ঠিত হবে ‘অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫।’ এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। আগের দিন মেলার ২০তম দিনে এই মঞ্চে ছিল ‘উপন্যাস, ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা : কয়েকটি প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া। প্রাবন্ধিক বলেন, রশীদ করীমের সাহিত্যকর্মের মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যাই সর্বাধিক, সেই অর্থে তিনি প্রথমত ও প্রধানত একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাসে মধ্যবিত্ত মানসের দ্বিধান্বিত ও অন্তর্দ্বন্দ্বময় আত্মস্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে।
ঔপন্যাসিক হিসেবে রশীদ করীম নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। বাঙালির ইতিহাস, সমাজ ও আচার-আচরণের বিবর্তন-পরিবর্তন বিষয়েও তিনি লিখেছেন। তবে সবই লিখেছেন একজন ঔপন্যাসিকের জায়গা থেকে। উপন্যাস পাঠের ভেতর দিয়ে আনন্দটাকেই তিনি প্রধান মনে করেছেন। এজন্য পরিশ্রমী পাঠকের চেয়ে রসিক পাঠকের দিকেই রশীদ করীমের পক্ষপাত। তিনি সজীব-স্বচ্ছ চোখে নিজে কী দেখতে পাচ্ছেন, সেটিই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সারকথা।
আলোচকদ্বয় বলেন, রশীদ করীম তাঁর জীবদ্দশায় ব্রিটিশ পর্ব, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ পর্ব প্রত্যক্ষ করেছেন, ফলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ব্যাপক। আধুনিক সমাজে ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো রশীদ করীমের উপন্যাসে প্রবলভাবে উপস্থিত হয়েছে।
তিনি সমাজকে অনেক গভীরভাবে বিচার করেছেন। তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলো পাঠককে মোহাবিষ্ট করে এবং পাঠক সহজেই নিজেকে সেইসব চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম করতে পারেন। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও গদ্যকার শাহাবুদ্দীন নাগরী এবং কবি ইমরান মাহফুজ।