
চাকরান জমি ভোগের বিনিময়ে খত কামানো আজ বিলুপ্তির পথে। আজ থেকে ৫ বছর আগেও গ্রামের হাট বাজারে,বড় কাজ বা খোলা আকাশের নিচে চুল বা খত কামাতে দেখা যেত। প্রামানিক বা শীলরা এ কাজ করতেন। গেরস্তের প্রয়োজনে বাড়ি বাড়িও যেতেন।সে হিসেবে বছরের শেষে ধান বা চাউল দিতেন গেরস্থ। গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার গ্রামের হাটবাজারে এমনই রীতি প্রচলিত ছিল।
কালের বিবর্তনে গ্রামের হাটবাজারে খোলা আকাশের নিচে চুল কাটা যেন স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সে সময় খোলা আকাশের নিচে কাটাকে বলা হত খত কামানো।খত কামানো মানে চুল কাটার আলাদা কোন স্টাইল বা ডিজাইন ছিল না। বড় চুল কেটে ছোট করে দেয়া হতো। যা কদম ছাট হিসেবে প্রচলিত ছিল। চুলও সেফ বা মাথা প্রতি ১০ টাকা নেয়া হতো। নর সুন্দর বা নাপিত একটি জলচকিতে খদ্দেরকে বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে গায়ে এক টুকরো কাপড় জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে কাঁচি চালাতেন। কেউ কেউ আবার বড় গাছ তলায় বসতেন। কালের বিবর্তনে খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কাটা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। শহর থেকে গ্রাম গঞ্জের হাটবাজারে এখন আধুনিক ব্যবস্থা। এমনকি চুল কাটতেও ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক মেশিন। আবিষ্কার হচ্ছে চুলের নানা ডিজাইন বা স্টাইল।
তবে এখনো গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া, মাহমুদপুর ও মহেশপুর ইউনিয়নের হাটবাজারে দৃশ্য দেখা যায়। পারুলিয়া ইউনিয়নের কুমারিয়া হাটে এখনো খোলা আকাশের নিচে চুল দাড়ি কাটেন সন্তোষীল। তিনি মাহবুদপুর ইউনিয়নের দিঘোর জাতি গ্রামের মৃত লগেন শীলের ছেলে। সন্তোষ শীল( ৫৫)জানান আমি আমার পিতা লগেন শীলের কাছ থেকেই খুর কর্মের শিক্ষা গ্রহণ করি। আজ থেকে প্রায় ৪0 বছর আগে কাশিয়ানী ও মকসুদপুর উপজেলার প্রায় হাটে স্বল্প মজুরি গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষের চুল দাড়ি কেটে আসছি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া কিছু জমি নিজে চাষ করি আর হাটবাজারে ক্ষুরকর্ম করে জীবিকা নির্ভর করি।আমার দুই মেয়ে এক ছেলে।মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। ছেলেকে এমএ পাস করিয়েছি। বর্তমানে বেকার। যুগে পুজি সংকটে ভালো একটি সেলুন দিতে পারছি না তাই বাদ দে হই ঐতিহ্য হিসেবে খোলা আকাশের নিচেই ক্ষর কর্ম করেকোন রকম সংসার চালাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কুমিরাহাটের মুদি ব্যবসায়ী খায়ের জানান কুমারিয়া হাটে দীর্ঘদিন সন্তোষ দাদাকে খোলা আকাশের নিচে স্বল্পমজুরিতে নাপিতের কাজ করতে দেখে আসছি। এখন আর কোথাও দেখা যায় না।বিজন শীল জানান আমার পুর্ব পুরুষ থেকেই প্রামানিকের কাজ করে আসছি।আমার বাবা কাকারা চাকরান জমি ভোগ কারা মধ্য দিয়ে গেরস্তের বাড়ি গিয়ে চুল দাড়ি কামানো বা খতকামানো কাজ করতাম।বয়সের ভারে প্রামাণিকের কাজ করতে কিচ্ছুটা সমস্যা হলে ও বর্তমানে সময় অনুযায়ী মোটামুটি ভালো আছি।
শিহাব