![তুরস্কে আবিষ্কৃত হাজার বছরের প্রাচীন ভূগর্ভস্থ শহর তুরস্কে আবিষ্কৃত হাজার বছরের প্রাচীন ভূগর্ভস্থ শহর](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/New-Project-4-2502141229.png)
তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত কাপাদোকিয়া অঞ্চলে আবিষ্কৃত হয়েছে এক অবিশ্বাস্য প্রাচীন ভূগর্ভস্থ শহর, যার নাম ডেরিংকুয়ো সিটি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই শহরটির বয়স প্রায় ৩,০০০ বছর বা তারও বেশি, যা মানব সভ্যতার প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন।
ডেরিংকুয়ো সিটির আবিষ্কার ঘটে ১৯৬৩ সালে, যখন এক স্থানীয় ব্যক্তি নিজের বাড়ির সংস্কারকাজ চলাকালীন হঠাৎ করেই একটি অদ্ভুত গুহামুখ আবিষ্কার করেন। কৌতূহলী হয়ে তিনি সেটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে একের পর এক রহস্যময় সুড়ঙ্গ ও কক্ষের সন্ধান পান। এরপর প্রত্নতাত্ত্বিক দল এসে এই অবিশ্বাস্য ভূগর্ভস্থ শহরটির সন্ধান নিশ্চিত করে।
ডেরিংকুয়ো সিটি প্রায় ১৮ তলা পর্যন্ত গভীরতা বিশিষ্ট, যা ভূগর্ভের ৮৫ মিটার নিচে বিস্তৃত। এ শহরে বসবাসের জন্য রয়েছে আবাসিক কক্ষ, গির্জা, ভান্ডারঘর, রান্নাঘর, পানির কূপ এবং এমনকি একটি বিদ্যালয় পর্যন্ত। এমন স্থাপনা নির্মাণ সেই যুগের মানুষের অসাধারণ স্থাপত্য দক্ষতা ও সৃজনশীলতার প্রমাণ বহন করে।
প্রতিটি তলা অত্যন্ত সুচারুভাবে সংযুক্ত এবং সংকীর্ণ সুড়ঙ্গপথ দিয়ে এক তলা থেকে অন্য তলায় যাওয়া যায়। শত্রুদের হামলা থেকে নিরাপত্তার জন্য সুড়ঙ্গগুলো পাথরের দরজা দিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা ছিল, যা শুধুমাত্র ভিতরের দিক থেকে খোলা যেত।এই ভূগর্ভস্থ শহরটি মূলত শত্রু আক্রমণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষার জন্য নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। হিত্তীয়, পার্সিয়ান এবং পরবর্তীকালে বাইজেন্টাইন যুগের লোকজন এখানকার বাসিন্দা ছিলেন। তারা শত্রুদের আক্রমণ এবং যুদ্ধকালীন সঙ্কট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে আশ্রয় নিতেন।
বর্তমানে ডেরিংকুয়ো সিটি তুরস্কের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ইতিহাসের গভীরে ডুব দিতে এবং প্রাচীন স্থাপত্যের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসেন। শহরটির বিস্ময়কর নকশা এবং ইতিহাসের মর্মস্পর্শী কাহিনী পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
ডেরিংকুয়ো সিটি শুধু একটি ভূগর্ভস্থ শহর নয়, এটি মানব সভ্যতার বুদ্ধিমত্তা, স্থাপত্যশৈলী এবং টিকে থাকার কৌশলের এক জীবন্ত সাক্ষী। হাজার বছরের পুরোনো এই শহর আজও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রাচীন যুগের মানুষের শৈল্পিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার কথা।
বিশ্বের রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে ডেরিংকুয়ো সিটি এক অনন্য অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে, যা ইতিহাসপ্রেমী এবং পর্যটকদের মনে যুগ যুগ ধরে বিস্ময় জাগিয়ে রাখবে।
রাজু