![নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/4-2502131123.jpg)
সমাজের সমসংখ্যক নারী গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রক্রিয়া থেকে বিচ্যুতই শুধু নয় ক্রমাগত পেছনে পড়ে থাকছে। যা সমাজ-সংস্কারের হরেক পরিবর্তনে নতুন কিছু দৃশ্যমান না হওয়াও সংশ্লিষ্টদের জন বিপরীত স্রোত। পুরানো সরকারের বিদায়ে নতুন সময় দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আলোচনায় উঠে আসছে নারীর রাজনৈতিক চেতনা কি সময়ের অগ্রগতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে? বিভিন্ন সময় ধরে উঠে আসা এক বাস্তবসম্মত জিজ্ঞাসা। আবার নতুন পটপরিবর্তনে সামনে অপেক্ষা করছে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও যৌক্তিক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রশ্ন থাকছে দীর্ঘ ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল অবধি নারী শাসনের একাধিপত্যে তাদের রাজনৈতিক চিন্তা কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যৌক্তিকতা কতখানি প্রভাব বিস্তার করবে আগত সময়ের জন্য? তবে জনগণের রাজনৈতিক সক্ষমতা, দক্ষতা দেশ ও জাতির জন্য এক স্পর্শকাতর প্রেক্ষাপট। নারী শিক্ষা যেমন অবারিত হয়েছে গত শতকের মাঝামাঝি থেকে সেভাবে অনেক স্বজাত্যবোধ কিংবা দেশের প্রতি সচেতন দায়বদ্ধতায় বিকাশের ধারা অনেকটাই স্তিমিত। দেশ শাসন করা সহজ মোটেও নয়। তার চেয়ে কঠিন আদর্শগত চেতনা লালন-ধারণ করে দেশমাতৃকার জন্য নিবেদন, সমর্পণ হওয়া। সমসংখ্যক নারীর জন্য তা আরও কঠিন হয়ে যায়। একজন রাজনৈতিক নারী ব্যক্তিত্ব একাধারে স্ত্রী, মা, গৃহিণী, কর্মজীবী একই অঙ্গে কত না রূপ। সেখানে রাজনীতির মতো আদর্শগত, সাংগঠনিক কঠিন এক বাতাবরণ নারীকে কতখানি স্বস্তি আর সুস্থিরভাবে ঠিক থাকতে সহায়তা করে সেটা ও বিবেচ্য বিষয়। শিক্ষার্থী জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে ছাত্রীরা। যদিও সংখ্যায় তারা নিতান্ত কম। রাজনীতি শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতা কিংবা অঙ্গীকার নয় বরং ধ্যানে, জ্ঞানে দেশকে অন্তরের নিভৃতে জিইয়ে রাখাও রাজনীতির মূল শক্তি। তার আগে প্রশ্ন এসে যায় আমাদের বাংলাদেশের সিংহভাগই এখনো পল্লী জননী। বৃহদাংশই বাস করে গ্রামে। ফলে সেখানে শিক্ষার হার বাড়লেও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার সুযোগ নিতান্ত কম। তার ওপর উন্নয়নশীল বাংলাদেশ এখনো মান্ধাতা আমলের হরেক বিধি ব্যবস্থায় চরমভাবে আটকানো। সেখানে সবার আগে সামনে এসে দাঁড়ায় কন্যা শিশু বিয়ে। যা আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশের জন্য অবধারিত এক দুর্ভোগ। যে সমাজে কন্যাশিশুকে বাল্যবিয়ের আবর্তে জড়িয়ে রাখা হয় সেখানে শিক্ষা আর অন্যবিধ সামাজিক সুযোগ কতখানি অবারিত বলাইবাহুল্য। সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর উদাত্ত কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন অবোধ শিশু-কন্যাদের বিয়ের পিঁড়ি নয় বিদ্যালয়ে পাঠানো জরুরি। জ্ঞানে, শিক্ষায় নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝার সক্ষমতা তাদেরই অর্জন করতে হবে। আর পরিবার বটবৃক্ষের মতো ছায়া দেবে। শিক্ষায় এগিয়ে গেলে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিরোধ এমন সব স্পর্শকাতর অভিব্যক্তি তাদের নাড়া দেয়। কিন্তু বাস্তবে সে অবস্থান শূন্যের কোঠায়। অর্থাৎ জোর জবরদস্তি করে বিয়ের পিঁড়িতে নিয়ে যাওয়াই নয় পরবর্তীতে আরও ভয়ংকর দুরবস্থার শিকার হতে হয়। অকাল মাতৃত্বের মতো আর এক অপরিণত দুর্ভোগ। কষ্টকরভাবে উপলব্ধি করতে হয় এক শিশুর ভ্রƒণের মধ্যে আর এক শিশু বেড়ে উঠছে। বাল্যবিয়ে শুধু অকাল মাতৃত্বের বিষফোঁড়া নয় বরং এক কন্যা শিশুর আগামীর সম্ভাবনাময় জগতে পানি ঢেলে দেওয়ার মতোই। যা থেকে আজও আমাদের মুক্তি মেলেনি।
শুরুটা করি নারীর রাজনৈতিক সচেতনতা, দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন। শুধু শাসনকার্য পরিচালনা নয় সমসংখ্যকের মধ্যে আদর্শগত বোধ, দেশের প্রতি অকৃতিম দায়বদ্ধতা ছাড়াও সাংগঠনিক দক্ষতা, পারদর্শিতাও নিতান্ত জরুরি। আগেই উল্লেখ করা হয় নারী শুধু শাসনকার্য কিংবা রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকেন না। তাকে সন্তান ধারণ লালন করতে হয়। সংসার ধর্ম পালন করতে গিয়ে অনেক সামাজিক অনুশাসনের অনুবর্তিও হতে হয়। সন্তানের জন্য মাকে সারা জীবন অনেক কিছু ছেড়ে দিতে হয়। বাধ্য হয়ে নয় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নিজের দায়-দায়িত্ব পালন করার অদম্য স্পৃহা থেকে। আর আমাদের গ্রামাঞ্চলে শুধু শিক্ষা থেকে ঝরে পড়াই নয় বাল্যবিয়ের কোপানলে পড়তেও খুব বেশি সময় লাগে না। এমন সব পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা সামাল দিয়ে রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় নিজের মেধা মননকে সক্রিয় করবে তেমন সময় মেলাতেও দিনক্ষণ পার হয়ে যায়।’ তাই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা যেখানে শুধু দেশপ্রেম নয় আদর্শ আর শুদ্ধ চেতনার অবিমিশ্র ধারা সংযোজন সেটাও এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে বলতে দ্বিধা হয় না রাজনীতির ঝুঁকিপূর্ণ আঙিনা আজ আর নারীদের কঠিন কোনো বলয় নয়। যুগের চাহিদা, সময়ের গতি, বিশ্বায়নের প্রভাব সব মানুষের সচেতন মনোসংযোগে আদর্শগত ধারায় বিকশিত হওয়া দেশ-জাতির পরম আকাক্সক্ষা, পাওয়া। শুধু রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতাই নয় বরং সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মিলন দ্যোতনায় হয়ে ওঠে আর এক প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের চমৎকার দৃশ্য। সবার আগে প্রশ্ন উঠছে নির্দিষ্ট যে কোনো রাজনৈতিক দলকেই এগিয়ে আসতে হবে নারীর মধ্যে জিইয়ে থাকা দেশাত্মবোধের সত্তাকে জনগণের সামনে নিয়ে আসা। সামনে অপেক্ষা করছে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যা নারীদের আরো সংঘবদ্ধভাবে রাজনৈতিক সচেতন করবে।