জীবন যুদ্ধে হার না মানা মনোয়ারা বেগম। তার মতে, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। লোকে কী বলল তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তার কর্মজীবনেও প্রথম কাজ করতে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। ভাবতেন লোকজন কে কী বলবে। এখন তার কাছে মানুষের কথা কিছু যায় আসে না। জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ নারীর মতে, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের নতুন গোবর ধানের কুঠি গ্রামের গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় তার বিয়ে দেন বাবা-মা। জীবন জগৎ সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে যেয়ে গ্রামের শিশুদের সঙ্গে খেলতে যেত। গ্রামবাসীরা এ নিয়ে নানা কথা বললেও শিশু মনোয়ারা নীরবে সহ্য করেছিল সব কিছু। সংসার কি জিনিস কিছুই বুঝতেই পারেনি। স্বামীর অভাবের সংসারে নানা কষ্টে তার দিন কাটছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক বছরের মধ্যেই এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। কন্যা সন্তানের কারণে প্রতিনিয়ত শ্বশুরবাড়ির মানুষের কাছে অবহেলার শিকার হতেন মনোয়ারা। নীরবে সব অপমান সহ্য করত। এ রকম পরিস্থিতিতে তাকে এবং তার স্বামীকে শ^শুর-শাশুড়ি আলাদা করে দেন। চরম কষ্টে দিনযাপন করে তাদের সন্তানকে নিয়ে। এরপর স্বামী-সন্তান নিয়ে শুরু হয় মনোয়ারা বেগমের সংগ্রামী জীবন।
মনোয়ারা বেগম জানান, বিয়ের পর স্বামীর আয় রোজগার ছিল না। এমন অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন সংসার আলাদা করে দিলে চরম কষ্টে পড়েছিলাম। এমনকি সন্তানের দুধ খাওয়ানোর টাকাও ছিল না। স্বামী প্রতিদিন দিনমজুরির কাজও পেত না। মাঝেমধ্যে কাজ পেলেও ও প্রতিবেশীদের কাছে ধারদেনা করে চলতে হতো। এরপর স্বামীর দিনমজুরির সামান্য টাকা আর আমার কাঁথা সেলাই করে যে আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকমে চলত সংসার। একসময় কাঁথা সেলাইয়ের কিছু টাকা সঞ্চয় করে হস্তশিল্পের সেলাই মেশিন কিনে কাজ শুরু করি। এক বছর পর সেলাই মেশিনের কাজের টাকা থেকে সংসার খরচ বাঁচিয়ে ১২ হাজার টাকা সঞ্চয় করি। সে বছরেই বাসার থাকার ঘরের একাংশে মুদি দোকান খুলে বসি। এ সময় এলাকাবাসী সবাই আমার দোকান থেকে কেনাকাটা করে আমাকে সহযোগিতা করত। এখন আমার মুদি দোকানে দৈনিক প্রায় ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে এলাকার লোকজন আমাকে সম্মান করে। আর আমার স্বামী এখন ঢাকায় একটি বিস্কিট কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে। মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছি। দুইজনের টাকায় সংসার বেশ ভালোই চলছে।
মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, গ্রামে মুদি দোকান খুলে বসায় কেউ কেউ আমাকে ভিন্ন চোখে দেখত। বলত নানা কথা। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট পেলেও হাল ছাড়িনি। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন এবং সংসারের অভাব আমাকে আজ সফলতার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তার মতে কোন পেশায় খারাপ নয়, কাজের প্রতি শ্রদ্ধা ও নিজের প্রতি বিশ্বাস থাকলে সফলতা আসবে। প্রতিবেশী আনিসুল হক জানান মনোয়ারা বেগম আমাদের গ্রামের একজন সফল উদ্যোক্তা। আশপাশের অনেক পুরুষ মহিলা আসে। তার জীবনের নানা গল্প শোনে। এবং তারাও তাদের এলাকায় এমন উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করতে চায। সংসার থেকে অভাব দূর করতে চায়। মনোয়ারা ওইসব মহিলাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে।