![চট্টগ্রামের জিমনেসিয়াম মাঠে বইপ্রেমীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি চট্টগ্রামের জিমনেসিয়াম মাঠে বইপ্রেমীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/10-2502091817.jpg)
.
বাঙালির ভাষা সংগ্রামের মাস ফেব্রুয়ারি। ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে সংগ্রামের এ মাসটি একইসঙ্গে শীত ও বসন্তের সন্ধিক্ষণ। এ মাসে দিকে দিকে প্রবল আকর্ষণের একটি আয়োজন অমর একুশে বইমেলা। এই মেলা ঘিরে পরিলক্ষিত হয় প্রাণের উচ্ছ্বাস। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি বইমেলায় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সী মানুষের প্রাণবন্ত উপস্থিতি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
চট্টগ্রাম মহানগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে চলছে একুশে বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১ লাখ বর্গফুটের মাঠজুড়ে সেজেছে বইয়ের পসরা। ১৪০টি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছে দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনী সংস্থাগুলো। মেলা এখনো একেবারে জমজমাট রূপ ধারণ করেনি। তবে দিন যতই যাচ্ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে আলাপে যা জানা গেল তা হচ্ছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী বিক্রি কম। অনেকেই আসছেন মেলা দেখার জন্য। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের আনন্দটাই বেশি। বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা শিশুরা বইয়ের মলাট ও নাম দেখে পছন্দ করছে বই। আর সন্তানদের বই কিনে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য থাকে না অভিভাবকের। ফলে শিশুদের বই তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর পরও সাধারণত প্রতিবছর এ সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ বিকিকিনি থাকে এবার তেমনটি নয়। তবে দিন যত গড়াবে ততই বিক্রি বাড়বে বলে আশাবাদ প্রকাশকদের।
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠটি এরই মধ্যে বইমেলার জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানে পৃথক পৃথকভাবে বইমেলা অনুষ্ঠিত হতো। ফলে এ মেলাগুলো তেমন প্রচার পেত না। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সকলকে একত্রিত করে এই মাঠে একটি বড় বইমেলার আয়োজন চলছে ৫ বছর ধরে। এতে করে মেলার আমেজ যেন বেড়েছে, তেমনিভাবে চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি আশাও পূরণ হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর একটি কামনা ছিল বড় কলেবরে একটি একুশে বইমেলা, যে আশা পূরণ হয়েছে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা যুক্ত হওয়ায়।
এবার একুশে বইমেলায় রয়েছে বই প্রদর্শনী ও বিক্রির পাশাপাশি নানা আয়োজন। মাসব্যাপী এ মেলায় আছে রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস একুশ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোকজ উৎসব, তারুণ্য ও ছাত্র সমন্বয় উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমি উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা ও চাটগাঁ উৎসব। মেলামঞ্চের আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন দেশের প্রতিথযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ।
নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরবার জন্য ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ওপর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় আছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সেলফি কর্নার। সমাপনি দিনে অনুষ্ঠিত হবে পুরস্কার বিতরণ।
চট্টগ্রামের একুশে বইমেলা ঘিরে এমএ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকায় এখন লেখক, পাঠক ও সংস্কৃতিসেবীদের উপস্থিতি। বই কেনা ছাড়াও ফেব্রুয়ারির প্রতিদিনের বিকেলে এক ধরনের মিলনমেলা। ২৬ দিনের এ বইমেলা প্রতিদিন চলছে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য মেলাঙ্গন উন্মুক্ত থাকছে।