ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১

এক কৃষকের ছেলের হাত ধরেই এসেছে আজকের টেলিভিশন!

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এক কৃষকের ছেলের হাত ধরেই এসেছে আজকের টেলিভিশন!

ছবি: সংগৃহীত

আজকের প্রতিটি টেলিভিশনের ভেতরে এমন ১০০টিরও বেশি উপাদান রয়েছে, যার প্যাটেন্ট শুধুমাত্র এক কৃষকের ছেলের নামে নিবন্ধিত। ফিলো ফার্নসওয়ার্থ (Philo Farnsworth)— এই অসাধারণ আবিষ্কারকের নাম হয়তো অনেকেরই শোনা হয়নি। কিন্তু তার আবিষ্কার ছাড়া আধুনিক টেলিভিশন কল্পনাই করা যেত না।

১৯০৬ সালে আমেরিকার ইউটাহ প্রদেশে এক কাঠের কেবিনে জন্ম নেওয়া ফিলো ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত কৌতূহলী ও মেধাবী। তখনকার সময়ের গ্রামীণ জীবন ছিল একেবারেই আলাদা—তখন ফ্রিজ, গাড়ি, সিনেমা, রেডিও কিংবা টেলিভিশনের অস্তিত্বই ছিল না। যারা ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, তাদের পক্ষে সেই সময়ের জীবনযাত্রা কল্পনা করাও কঠিন। শৈশব থেকেই ফিলো ছিলেন এক অদম্য আবিষ্কারক। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে দেখে বোঝার চেষ্টা করতেন, কীভাবে সেগুলো কাজ করে। টমাস এডিসন ও আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ছিলেন তার নায়ক। পড়াশোনায় দারুণ আগ্রহী এই কিশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন পড়তেন গভীর মনোযোগ দিয়ে।

একদিন, ১৪ বছর বয়সে, পরিবারের আলু খেতে হালচাষ করার সময় তিনি মাঠের লম্বা সরল রেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবলেন—যদি এই ধরনের সমান্তরাল রেখায় আলোর কণা পাঠানো যায়, তবে কি চিত্র প্রেরণ করা সম্ভব হবে? ঠিক এই চিন্তাই তাকে টেলিভিশন আবিষ্কারের ধারণা দেয়। তিনি একে বলতেন "বোতলের ভেতর আলো ধরে রাখা"। এই চিন্তাভাবনার সূত্র ধরে ফিলো কাজ শুরু করেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে, ১৯২৮ সালে, তিনি সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক প্রযুক্তিতে চালিত প্রথম কার্যকর টেলিভিশন তৈরি করেন।

কিন্তু তার এই উদ্ভাবন সহজেই স্বীকৃতি পায়নি। বিশাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান RCA (Radio Corporation of America) তার প্যাটেন্ট চুরি করার চেষ্টা করেছিল। তবে ফিলো আইনি লড়াইয়ে জয়ী হন এবং তার প্রকৃত অবদানের স্বীকৃতি লাভ করেন।

ফিলো শুধু টেলিভিশনের আবিষ্কারেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি তার জীবদ্দশায় ১৫০টিরও বেশি উদ্ভাবনের প্যাটেন্ট পেয়েছিলেন। শৈশবেই তিনি একটি নতুন ধরনের ইগনিশন লক তৈরি করে পুরস্কার জিতেছিলেন, যা মডেল টি ফোর্ড (Model T Ford) গাড়ি চুরি হওয়া ঠেকাতে সাহায্য করত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জীবদ্দশায় তিনি তার প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি। ১৯৭১ সালে, মাত্র ৬৪ বছর বয়সে, তিনি প্রয়াত হন, প্রায় বিস্মৃত এক নায়ক হিসেবে।

ফিলো ফার্নসওয়ার্থ টেলিভিশন আবিষ্কার করেছিলেন কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং তিনি চেয়েছিলেন এই প্রযুক্তি মানুষের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দেবে, পরিবার ও সম্প্রদায়ের মধ্যে গল্প বিনিময় সহজ করবে এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। তার এই দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন ঘটে তার এক অসাধারণ অভ্যাসে—তিনি ঘুমের মধ্যেও সমস্যার সমাধান খুঁজতেন! ফিলো বিশ্বাস করতেন, "কীভাবে ঘুমিয়েও কাজ করা যায়? নিজেকে এমন সব সমস্যা দিয়ে ব্যস্ত রাখো, যা ঘুমের মধ্যেও সমাধান করা সম্ভব।"

আজকের যুগে যখন আমরা অনায়াসে টেলিভিশন দেখি, তখন আমাদের মনে রাখা উচিত এই বিস্মৃত প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর কথা, যার চিন্তা ও কঠোর পরিশ্রম ছাড়া আধুনিক টেলিভিশন সম্ভব হতো না।

সূত্র: জেমস পিটারসন

এম.কে.

×