![বিয়ের ঘটক বিয়ের ঘটক](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/4-2502091343.jpg)
বিয়ের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। না, তাই বলে সারা বছর বিয়ে হয় না, তা নয়। এই সময়টায় তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। একটা সময় বিয়ের সম্পর্কগুলো আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমেই বেশি হতো। কোনো ছেলে বা মেয়ে বিয়ের যোগ্য হলেই নিজেরা আগ বাড়িয়ে পাত্র-পাত্রীর খোঁজ দিতেন। আর থাকত ঘটক। ঘটক মানেই চোখে ভাসে মাথায় টুপি, হাতে ছাতা আর কাঁধে ঝোলা নিয়ে পান খেয়ে মুখ লাল করা একজন মাঝ বয়সী মানুষ। আবার মেয়েদেরও দেখা গেছে ঘটকালি করতে। বোরকা পরে কাঁধে বড় এক ব্যাগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাত্র-পাত্রীর সন্ধান দেয় তারা। তাদের সেই বড় ব্যাগ বা ঝোলাতে থাকে পাত্র-পাত্রীর ছবিভর্তি অ্যালবাম আর জীবনবৃত্তান্ত। যে বাড়িতেই বিয়েযোগ্য ছেলেমেয়ে থাকত, সেখানে গিয়ে বসে থাকত। আবার পাত্র-পাত্রীর বাবা-মাও ঘটককে তাগাদা দিতেন ভালো কাউকে খুঁজে দিতে। চেয়ে নিত যাতায়াত ও পান খাওয়ার খরচ। দিন বদলেছে, এখন আর সেই ছাতা হাতে ঝোলা কাঁধে নিয়ে ঘটককে খুব একটা দেখা যায় না। হয়ত গ্রামে এখনো আছে। কিন্তু শহরে নেই বললেই চলে।
প্রযুক্তির কল্যাণে দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। কেনাকাটা থেকে শুরু করে পড়াশোনা-গবেষণা সবই হচ্ছে ঘরে বসে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। ইদানীং এই ঘটকের কাজটাও অনলাইনে হচ্ছে। সার্চ দিলেই পাওয়া যায় বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়া। যেখানে সবার চাহিদামতো পাত্র-পাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়। এই ম্যারেজ মিডিয়াগুলোর বেশিরভাগই জনপ্রিয়তা পেয়েছে করোনা মহামারিকালে। পরিচিত এক গ্রুপের অ্যাডমিনকে কয়েকজন অনুরোধ করছিল বিয়েশাদির একটা গ্রুপ তৈরি করার জন্য। একটা গ্রুপ সঠিকভাবে চালানোর জন্য চাই ভালো ব্যবস্থাপনা। তাই প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে তিনি রাজি হলেন। ভাবলেন, একটা জোড়া মিলিয়ে দেওয়া অনেক পুণ্যের কাজ। খুলে দিলেন ‘ঘটকবাড়ি’ নামে একটি গ্রুপ। যেখানে কিছু শর্ত ও নিয়মনীতির মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর ছবি, জীবনবৃত্তান্ত আর কেমন পাত্র বা পাত্রী চায় তার সব লেখা থাকে। সবাই যার যার পছন্দমতো জোড়া খুঁজে নেয়। লাগে না কোনো ফিস। তবে খুঁজে নেয়া থেকে সমস্ত দায়-দায়িত্ব নিজেদের। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ৬ মাসের মধ্যে এক দুই করে ১৫/২০টির মতো বিয়ে হয়ে গেল। কথা হলো ম্যারেজ সলিউশন বিডি ডটকম (marriagesolutionbd.com)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন শুভর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন ও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি সৎকর্ম এবং সাদাকা। এ চিন্তা থেকেই ব্যক্তি পর্যায়ে কয়েকটি পরিবারকে বিয়ের কাজে সহযোগিতা করি। পরবর্তী সময়ে সামাজিক কল্যাণের কথা ভেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে লালমাটিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এসব কাজের প্রথম শর্ত হচ্ছেÑ পাত্র-পাত্রী সম্পর্কে শতভাগ সঠিক তথ্য ও জীবনবৃত্তান্ত প্রদান করা। এ ছাড়া থাকে বিয়ে বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও কাউন্সেলিং। অনলাইন, অফলাইন দুভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।’ যান্ত্রিক এ জীবনে সবাই ব্যস্ত। তাই আগের মত আত্মীয়ের মাধ্যমে বিয়ের সম্বন্ধ তেমন আসে না। ভরসা এখন এসব ম্যারেজ মিডিয়া। অনেকেই দ্বারস্থ হচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের। বিয়ে চিরন্তন একটি সামাজিক সংগঠন। যতই মিডিয়ার উপর ভরসা করেন না কেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নিজেদের প্রয়োজন আর চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলো নিজেরা মিটিয়ে নিন। যাতে দু’পক্ষের মাঝে কোনো ফাঁক না থাকে।
যাপিত জীবন প্রতিবেদক