ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১

ভাষা ও ভালোবাসার মাস

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভাষা ও ভালোবাসার মাস

‘সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা/আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি-/খোকা তুই কবে আসবি! কবে ছুটি?’- সেদিন সাজনা গাছভরে তারার মতো ফুটে থাকা ফুলগুলো দেখেই কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে গেল। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুরু। বইমেলা, ফাগুন আর ভালোবাসারও দোলা লেগেছে যেন প্রকৃতিতে। ফাগুনের কথা মনে হতেই মন গুন গুন করে উঠল- ’৫২-এর ৮ ই ফাল্গুন, মা’র ভাষায় কথা বলে হলো যারা খুন’- গানটা ভালো মনেও নেই। সেই কোন ছোটবেলায় শুনেছিলাম! তখন থেকেই অপেক্ষায় থাকতাম কবে ২১ ফেব্রুয়ারি আর ৮ ফাল্গুন এক হবে। কয়েক বছর ধরে দুটো তারিখ পাকাপোক্তভাবে এক হয়েছে। সেই সঙ্গে মিলে গেছে ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইনস ডে- তারাও এখন একই দিনে পালিত হয়। এত আনন্দ আকাশে বাতাসে, তবু মনের কোণে বেজে উঠে এক করুণ সুর- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো/ একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি-’। হ্যাঁ, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবিতে রাজপথে লুটিয়ে পড়েছিল রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ বেশকিছু তাজা প্রাণ। যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা বাংলায় কথা বলছি। কখনো ২৮ কখনো ২৯ এর একটি মাস ফেব্রুয়ারি। অথচ সেখানে কত রং আর রংহীনতায় ভরপুর। সব রং যেন মিলিয়ে যায় যখন ভাষা শহীদদের কথা মনে হয়। সেই ভাষাকে আমরা আজ অনেকেই ব্যঙ্গ করে উচ্চারণ করি। ইংরেজির উচ্চারণে চিবিয়ে বাংলায় কথা বলা যেন আমাদের এক রকম ফ্যাশন হয়ে গেছে। আর যারা ইংরেজিতে অভ্যস্ত, তারা তো বাংলা বলতেই চায় না। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। বিভিন্ন প্রয়োজনে ইংরেজি জানা অবশ্যই দরকার। কিন্তু তা যেন আমাদের মাতৃভাষাকে ব্যঙ্গ আর অসম্মান না করেÑ সেটা আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। একটা সময় ফেব্রুয়ারি এলেই নিজেদের বাঙালি করতে ব্যস্ত হয়ে যেত সবাই। ভোরে প্রভাত ফেরিতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠত। এখন তাও যেন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একুশের স্লোগান আর কিছু গানের কলি লিখা পোশাক পরে ভাষা দিবসকে স্মরণ করি। মুক্তিযুদ্ধকে এখনো যাঁরা হৃদয়ে ধারণ করেন, তাঁরাই এ দিনটিকে মনেপ্রাণে পালন করেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। যদিও এটি আমাদের নিজস্ব কোনো উৎসব নয়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে তা আমাদের সংস্কৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে। লাল শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা উদযাপন করে এই দিনটি। বিশেষ দিনগুলোকে আমি সমর্থন করি। যদিও ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ নেই। তবু একটা বিশেষ দিনে ভালোবাসার বিশেষভাবে বহির্প্রকাশ অন্যরকমই লাগে। একটু আয়োজন করে ভালোবাসার প্রকাশ হোক না। তাতে মনের কোণে জমে থাকা মান-অভিমানগুলো সরে যায়। অনেকে ভাবেন এই ভালোবাসা দিবস শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য। না, এই বিশেষ দিনটি সবার জন্য। বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু বা খুব কাছের কোনো প্রিয় মানুষকেও জানাতে পারেন ভালোবাসার অনুভূতি। বিশেষ কোনো উপহার দিয়েও প্রকাশ করতে পারেন ভালোবাসার অনুভূতিটি। তা হতে পারে প্রিয় মানুষটির পছন্দের কোনো জিনিস বা আপনারই প্রিয় কিছু। সেই ভালোবাসা হতে পারে আমাদের প্রিয় দেশ, ভাষা আর ভাষা শহীদদের প্রতিও। সাদা কালো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ বা পাজামা-পাঞ্জাবিতে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন নয়, এর চেতনাকে জাগ্রত রাখতে হবে সব সময়। প্রভাত ফেরি আমাদের মনে অনুপ্রেরণা জোগাবে। ভাষা ও ভালোবাসার এ মাসের অনুভূতিগুলো সারা বছর জিইয়ে থাকুক প্রতিটি সম্পর্কের মাঝে।

×