ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, জাগবে  তো প্রাণ?  

জনকণ্ঠ ফিচার 

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বসন্তের হাওয়া বইতে শুরু করেছে, জাগবে  তো প্রাণ?  

.

শীত মোটামুটি গেছে। শেষ পর্যায়ে মাঘ। আজ রবিবার ২৬তম দিন। ফলে, বসন্তের জন্য অপেক্ষা এখন। না, বেশি দূরে নয়। মাত্র কদিন। এর পরই শুরু হয়ে যাবে ফাল্গুন। নব ফাল্গুনে প্রথম দিন বাঙালি বসন্ত উৎসবে মাতবে। এ দিনটি সব সময়ই দারুণ উৎসবমুখর হয়। বাসন্তী রঙে সেজে ওঠে গোটা রাজধানী শহর। উৎসব উদ্যাপন শুধু নয়, মনের রংটাও বেশ বদলে যায়। অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে এই আবেগের যোগ আছে। বসন্তের পুলক মেলাকেও নতুন প্রাণ দেয়। আগেভাগেই টের পাওয়া যায়, ‘বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ 
অষ্টম দিনে মেলায় প্রবেশ করে অন্যান্য বছরের মতোই বসন্তের  আগাম বার্তা পাওয়া গেছে। গত কদিন ধরে তরুণ-তরুণীদের সাজ পোশাকে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এ পর্যায়ে ঘন ঘন চোখে পড়ছে বাসন্তী রং। বিশেষ করে তরুণীরা বাসন্তী রঙের জামা বা শাড়ি পরে মেলায় আসতে শুরু করেছেন। অনেকের খোঁপায় জায়গা করে নিয়েছে মৌসুমি ফুল। রঙিন ফুল দিয়ে ক্রাউন তৈরি করে মেলার প্রবেশ পথে বিক্রি করা হচ্ছে। সেই ক্রাউন কিনে মাথায় বসিয়ে মেলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। হলুদ গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকারা জানান দিচ্ছে, খুব কাছে বসন্ত। বসন্তের দিন মেলায় পাঠক বেশি হয়। বিক্রিও বাড়ে। ফলে, প্রকাশকরাও ফাগুন দিনের প্রতিক্ষা করছেন। আবার শঙ্কাও আছে মনে। বর্তমানে নানা ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। অনিশ্চয়তা কাটছে না। অনেকের মনের ওপর বাড়তি চাপ। ফলে, বসন্তে কতটা জাগবে প্রাণ, তা নিয়ে সংশয় সন্দেহ আছে। মেলায় আসা পাঠক দর্শনার্থী লেখক পাঠক প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে এমন সন্দেহ সংশয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে আশাবাদী অংশটির বক্তব্য, অমর একুশে বইমেলা বলেই এর একটা জোর আছে। শক্তি আছে। শক্তির কাছে অন্যসব ফিকে হয়ে যাবে। ফাল্গুনে ঠিকই জেগে ওঠবে প্রাণ। ভয় কেটে যাবে। লেখক পাঠক প্রকাশকের সৃজনশীল গল্প আড্ডায় মুখরিত হবে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রাণের মেলায় সবাই যে যার পছন্দ মতো বই সংগ্রহ করবেন। পহেলা ফাল্গুন গতি দেবে মেলাকে। এগিয়ে নিয়ে যাবে, তেমন আশা আশাবাদীদের। 
শিশু প্রহর ॥ শনিবার ছুটির দিন মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। এদিনও শিশুরা বেলা ১১টা নাগাদ মেলায় প্রবেশ করে। বই সংগ্রহের পাশাপাশি সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় তারা। পরে বেলা ৩টা থেকে সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি চত্বর।  
১০২ নতুন বই ॥ মেলার অষ্টম দিনে ১০২টি নতুন বইয়ের তথ্য দিয়েছে বাংলা একাডেমি। 
নির্বাচিত বই ॥ মেলায় এখন পর্যন্ত আসা নতুন বই থেকে নানা বিবেচনায় আমরা কিছু বইকে আলাদা করার চেষ্টা করছি। সে হিসেবে আজ পাঁচটি নির্বাচিত বইয়ের তথ্য তুলে ধরা হলো। 
বাংলাদেশের দাসতন্ত্রের ইতিহাস ॥ ইসহাক সিদ্দিকীর বই। প্রকাশ করেছে আগামী। বাংলাদেশের দাসতন্ত্রের ইতিহাস নিয়ে প্রথম  মৌলিক রচনা বলা যায় এটিকে। আর্যকাল থেকে বাংলাদেশে দাসতন্ত্রের উত্থান। ক্রমে তা বিস্তার লাভ করে। বইয়ে উপমহাদেশীয় বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। মূল্য ৪০০টাকা।   
সবিনয়ে জানতে চাই ॥ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশের চমৎকার উদ্যোগ। টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারূনের বই। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিটিভিতে এই শিরোনামে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হতো।  ১৯৯৬ সালে প্রধান চার রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার কথোপকথন এই বইতে স্থান পেয়েছে। সে সময়ের রাজনীতি  এবং বর্তমান বাস্তবতা বোঝাতে বইটি সহায়তা করবে।  
ফরহাদ মজহারের সঙ্গে কথাবার্তা ॥ বর্তমান সময়ের ব্যাপক আলোচিত নাম ফরহাদ মজহার। বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এই কবি লেখক চিন্তকের মনস্তত্ত্ব, কথাবার্তা ভাবের জগৎ নানাজনকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। তার সাক্ষাৎকার ভিত্তিক এ বইটি প্রকাশ করেছে আগামী। 
অ্যাডভেঞ্চার মেঘবতী ॥ জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই। আর জাফর ইকবালের বই মানেই দারুণ চাহিদা। বিপুল আকর্ষণ। শিশু-কিশোররা সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে। এ বইটিও বিষয় এবং স্বতন্ত্র রচনা শৈলীর কারণে সংগ্রহযোগ্য। প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। 
নারীর কথা ও নীরবতা ॥ আনোয়ারা সৈয়দ হকের রচনা। প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। ভূমিকা পাঠে বইটি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়, সেখানে বলা হয়েছে, নারী তার মনকে এখন পুরুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারছে। নিজের স্বাধীন চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটিয়ে চলেছে। শারীরিক সীমাবদ্ধতার আরোপিত সংজ্ঞাকে নারী অস্বীকার করতে শিখছে। ধর্ষণ নারীকে তার দাবি থেকে, তার অর্জন থেকে, তার স্বকীয়তা থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না আর। নারী এতদিনে আরও বুঝেছে, মানুষের তৈরি সমাজে নারীই শুধু ধর্ষিত হয় না, পুরুষও দমিত নির্যাতিত অসহায় ও বঞ্চিত। 
মূল মঞ্চের আলোচনা ॥ এদিন মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একজন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। আলোচনা করেন আবদুস সেলিম এবং মোহাম্মদ হারুন রশিদ। সভাপতিত্ব করেন খালিকুজ্জামান ইলিয়াস।  

×