নওগাঁয় দিন দিন চীনের বেইজিং বা পেকিন জাতের হাঁস পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাংস উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামীণ গৃহবধূদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ এই পিকিং হাঁস। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর মাধ্যমে জেলায় গড়ে উঠেছে শতাধিক পেকিন হাঁসের পারিবারিক খামার। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে গৃহবধূরা বাড়ির উঠানে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কেউ মাঁচায় আবার কেউ খাঁচায় গড়ে তুলেছেন পারিবারিক খামার। এই দ্রুত বর্ধনশীল হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার শতাধিক গৃহবধূ।
উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুর হোসেন জানান, চীনের পিকিং জাতের হাঁস মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। এই জাতের হাঁস দেখতে আকর্ষণীয় এবং অত্যন্ত দ্রুত বর্ধনশীল। সঠিক পরিচর্যা এবং সুষম খাবারের মাধ্যমে মাত্র ৪৫-৫০ দিনের মধ্যেই প্রতিটি হাঁস আড়াই থেকে তিন কেজি ওজন হয়। পিকিং হাঁস পালনের জন্য মাঁচা পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। ২০২০-২১ অর্থবছরে পিকেএসএফের অর্থায়নে এবং কারিগরি সহায়তায় মৌসুমী জেলার নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলায় একশ’ গ্রামীণ গৃহবধূদের মাঝে বিনামূল্যে পিকিং হাঁস বিতরণ করে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের একডালা গ্রামে বাসন্তী সমিতির আওতায় দশটি পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে পিকিং হাঁস, মাঁচার উপকরণ, খাবার এবং ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান এই উদ্যোগের ফলে একডালা গ্রামে ক্লাস্টারভিত্তিক পিকিং হাঁস পালনের খামার গড়ে উঠেছে। খামারিদের উৎপাদিত হাঁসের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে পাইকার, ফড়িয়া এবং স্থানীয় বাজারে হাঁস বিক্রেতাদের সঙ্গে খামারিদের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া পিকেএসএফ এর কৃষি ইউনিটভুক্ত প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় ২৫ নারীকে পিকিং হাঁস পালনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০০টি পেকিন হাঁস পালন করতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিটি খামারি হাঁস বিক্রি করে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারেন। একডালা গ্রামের মানুষ বিশেষ করে নারীরা পেকিন হাঁস পালন তাদের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করার সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়তই অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে পিকিং হাঁস পালনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
সদর উপজেলার একডালা গ্রামের শেফালী বেগম জানান, সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পেকিন হাঁস পালন করে তিনি অনেক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে তিনি প্রতিটি পেকিন হাঁস ৩শ’-৪শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। একশ’ হাঁস বিক্রির অর্ধেক টাকাই লাভ হচ্ছে। এতে করে সংসারের টুকিটাকি খরচের জন্য এবং সন্তানদের পড়ালেখার বাড়তি খরচের টাকা স্বামীর কাছ থেকে নিতে হচ্ছে না। তিনি পিকিং হাঁস পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এবং সংসারের অনেক অভাবও দূর হয়েছে। আগামীতে তিনি আরও বেশি করে পিকিং হাঁস পালন করবেন বলেও জানান।
সদর উপজেলার শৈলগাছী গ্রামের ঝর্ণা বেগম বলেন, সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে পিকিং হাঁস পালন করে মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করতে পারছি।
বদলগাছী উপজেলার ভাণ্ডারপুর গ্রামের জরিনা বেগম বলেন আগে দেশী হাঁস পালন করতাম এখন পিকিং হাঁস পালন করে ২ থেকে ৩ গুণ লাভ হচ্ছে। সংসারে আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মৌসুমী’ ভূমিকা রেখে চলেছে। নওগাঁয় বিদেশী দ্রুত বর্ধনশীল পিকিং জাতের হাঁস পালনে গ্রামের গৃহবধূদের উদ্বুদ্ধ করে আসছে মৌসুমীর প্রাণিসম্পদ বিভাগ। আমরা এমন কর্মকাণ্ডকে শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ গৃহবধূদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছি। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এমন সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানান।