ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান 

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

.

আমাদের প্রিয় শহর ঢাকার বয়স কম হয়নি। কিছুকাল আগে ভাবা হতো চারশ’ বছর। সাম্প্রতিককালের তথ্য প্রমাণ বলছে, বয়স আরও অনেক বেশি হবে। এই সময়ের মধ্যে প্রিয় শহর কত কী যে দেখেছে! এর পরও যেন দেখা শেষ হয় না। ঘটনা-দুর্ঘটনা, বিচিত্র উত্থান-পতন, ইতিহাস গড়া, ইতিহাস খুনের নিষ্ঠুর চেষ্টা, ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস- ঢাকা এসবের নীরব সাক্ষী। আর এখন এই ফেব্রুয়ারি মাসে এসে বিশেষভাবে বলতে হবে বাঙালির ভাষা চেতনার কথা।  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে নেমে এসেছিল বরকত, রফিক, শফিক জব্বাররা। পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। সেই রক্ত স্রোত মায়ের ভাষা রক্ষায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছিল। একুশের চেতনাই পূর্ণতা পায় একাত্তরে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করে খুনি পাকিস্তান বাহিনী। এ কারণেই ‘একুশ মানে মাথা নত না করা।’ একুশ মানে ঘুরে দাঁড়ানোর অপরিসীম শক্তি। অভিন্ন চেতনা লালন এবং ছড়িয়ে দেওয়ার  লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর ঢাকায় অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করা হয়। এবারও ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে বইমেলা চলছে। বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুলসংখ্যক স্টল ও প্যাভিলিয়ন। সবকটিতে বই। বইয়ের বিপুল সম্ভার। কিন্তু বৃহস্পতিবার মেলায় প্রবেশ করলে প্রথমেই দৃষ্টি কাড়লেন এক তরুণী।

বংলা বর্ণমালা ছাপাঙ্কিত শাড়িতে চমৎকার সেজে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সাদা শাড়িতে কালো বর্ণমালা কেন যেন প্রাচীন বেদনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বায়ান্নর শোক, বর্তমানের বেদনা সব মনে হচ্ছিল একাকার হয়ে গেছে! শামসুর রাহমান লিখেছিলেন: ‘তোমার মুখের দিকে আজ আর যায় না তাকানো/বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা।’ সত্যি আজও বর্ণমালাকে দুঃখিনী বলেই মনে হয়। মনে হয় নির্বাক, কেন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই চোখ চলে গেল শামসুর রাহমানের একটি কাব্যগ্রন্থে। একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন : অভিশাপ দিচ্ছি এতটুকু আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা।/প্রেতায়িত সেই সব মুখের উপর/দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,/অভিশাপ দিচ্ছি.../অভিশাপ দিচ্ছি.../অভিশাপ দিচ্ছি...। পড়তে পড়তে  কখনো ১৯৫২ সাল, কখনো ১৯৭১ সাল আবার কখনো ২০২৫ সালের নানা চিত্র ভেসে উঠছিল চোখে। অপনারও কি?  
শিশুপ্রহর আজ ॥ অমর একুশে বইমেলা শিশুদেরও। শিশুকিশোরদের জন্য বিশেষ শিশুপ্রহরের আয়োজন করা হবে আজ। এই উপলক্ষে মেলা খুলে দেওয়া হবে বেলা ১১টায়। বাবা মায়েরা একটু কষ্ট করে হলেও বাচ্চাদের নিয়ে সকাল সকাল মেলা ঘুরে আসতে পারেন। বাচ্চাদের জন্য আলাদা কর্ণার রাখা হয়েছে। কর্ণারে বিপুল বই। ছেলে মেয়েদের হাতে বই তুলে দিন। এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। বড়দের যে মেলা সেটি শুরু হবে বিকেল ৩টায়। সকালে গেলেও ক্ষতি নেই। অধিকাংশ স্টল ও প্যাভিলিয়ন খোলা পাবেন। পাবেন নতুন নতুন বইও। হ্যাঁ, অমর একুশে বইমেলায় বিগত দিনের সমৃদ্ধ প্রকাশনার পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন বই আসছে। গত কয়েক দিনে গতিও বেড়ছে প্রকাশনার। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ৮০টি নতুন বই প্রকাশের তথ্য দিয়েছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। আগের দিন বুধবার এসেছিল ৯৮টি নতুন বই। আজ শুক্রবার সবচেয়ে বেশি নতুন বই মেলায় আসবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। যান। ঘুরে আসুন আগেভাগে।    

×