জুলাই আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের পরিণতিতে লাগাতার অপশাসনের বিদায় সমাজ সংস্কারের নতুন পটপরিবর্তন যা নিতান্ত জরুরি ছিল। সেখানে শিক্ষার্থী আন্দোলনের পুরোভাগে ছাত্রীদের নজর কাড়া অংশগ্রহণ সমতাভিত্তিক সমাজের অনন্য চিত্র তো বটেই। তার পরেও কত অসমতা, বিভাজন আজও সমসংখ্যক নারীর জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
ক্ষুদ্র গৃহাঙ্গন থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে নিñিদ্র নিরাপত্তার বেষ্টনী সেভাবে দৃশ্যমান না থাকাও এক প্রকার হোঁচট খাওয়া। শুধু কি কোটা সংস্কার আন্দোলন, নানামাত্রিক বিবাদ বিভাজনে নারীর পিছু হটা আজও ঠেকানো গেল না। সংস্কার আন্দোলনের অর্ধ বছর পর হতে না হতেই পুনরায় আওয়াজ তুলতে হয় ছাত্রীদের স্বীকৃতি দিতে কেন এত কার্পণ্য? যখন জোটবদ্ধভাবে সংস্কার পরিক্রমায় লড়াইয়ের ডঙ্কা বেজে উঠল তেমন যুগান্তকারী মুহূর্তে ছাত্রীরা ঘরে বসে অলস সময় কাটায়নি কিন্তু। তারাও সংঘবদ্ধ আর স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগ্রামী অভিযাত্রায় লড়াইয়ের মধ্যে ময়দানে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়াই শুধু নয় অকাতরে উৎসর্গ করতে অকুণ্ঠিত ও দ্বিধাহীন ছিল। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আবারও সোচ্চার হচ্ছে নারীর সংগ্রামী দলিলকে কিছুটা হলেও পেছনে হটানো নিয়ে ইতিহাসের পথপরিক্রমায় সেই ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে ’৭১-এর মক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়া নারীরা আজও সমুন্নত শিরে বিপ্লব সংগ্রামকে আলিঙ্গন করে চলেছে। কোথাও কোনো ঘাটতি কিংবা পিছু হটা নেই। যদিও প্রচলিত সমাজ সংস্কার নারীর আধুনিক যাত্রাপথকে অবারিত আর স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নিতে হোঁচট খেয়েই চলেছে। নারীরা নিজেদের যথার্থ মানুষ ভেবেই সব ধরনের কর্মযোগ সমানতালে এগিয়ে শক্তি অর্জন করছেন। রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে দমে থাকছে না। রাজনীতিতে নারীর আগ্রহ কিংবা হচ্ছে কিছুটা কর্ম অস্বীকার করার পথ নেই। তেমন ধীরগতি যুগের দাবিতে এগিয়ে চলা। তা ছাড়া নারী সমাজের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার আধুনিক পরিকল্পনা সত্যিই সমাজকে নতুন আঙ্গিকে পাল্টে দিয়ে দেশ ও জাতি সম্পর্কে ভাবাও যেন সময়ের অপরিহার্যতা। তেমন ক্রান্তিকালীন সময় পার করা অত সহজসাধ্য কখনোই ছিল না। আজও খানিকটা পিছু হটার মর্মবেদনা। তবে রাজনীতিতে নারীদের যথার্থ অংশগ্রহণ অবারিত করতে বর্তমানে দাবি তোলা হচ্ছে সংসদে সংরক্ষিত আসনে নয় বরং সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সদস্য পদ অর্জন এক বিরাট আয়োজন তো বটেই। সফলতারও কমতি কিছু নেই। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণেই এমন কথা বলাও মুশকিল।
উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে ছাত্রীদের নজরকাড়া অংশগ্রহণ আজ সময়ের যুগান্তকারী আবেদন। সঙ্গতকারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনেও ছাত্রীদের সরব উপস্থিতিতেই শুধু নয় বৈপ্লবিক সংগ্রামী অভিযানে তাদের অনন্য আত্মত্যাগও ইতিহাসের নির্মাল্যতাই বৈষম্য বিলোপে সকলের সক্রিয় এবং সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হলে নারীদের রাজনৈতিক সচেতনায় যুগান্তকারী অবদান ঠেকানো অসম্ভব। তবে চিরায়ত পুরনো বিধির মূলোৎপাটন ছাড়া সমাজ সংস্কার অভিযানের কোনো অভীষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সফলতার সিঁড়ি স্পর্শে কালক্ষেপণ করবেই। তাই নারীরা নিজ থেকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লড়াই বিপ্লবের যাত্রাপথ অবাধ আর অবারিত থাকবে। সেখানে সবার আগে রুখে দাঁড়াতে হবে সংশ্লিষ্ট সমসংখ্যককেই। নিজের অধিকার, স্বাধীনতা, লড়াই সব কিছু অর্জন করতে হবে সমান সমান যোগ্যতা আর পারদর্শিতায়। যা কখনো ছাই ছাপা আগুনের মতো ভেতরে নিভৃতে দগ্ধই হয়নি। বর্তমানেও তেমন ধারাবাহিকতায় নারীর রাজনৈতিক দক্ষতা, অভিজ্ঞতাও নেতৃত্বদানের সফল সক্ষমতাকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। ইতোমধ্যে তা নজরকাড়া ভাবে আসতে শুরু করেছে। গতিবেগ বাড়াতে হবে। নিজেকে দমন করা নয় সদর্পে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়াই হবে জীবনের নিরন্তর সাধনা তেমন সুসময়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আর পেছনে হটা নয় দুর্বার দুরন্ত গতিতে বৈপ্লবিক চেতনায় সংগ্রামী পথযাত্রায় অভিষিক্ত হওয়া যেন সময়ের দাবি।
অপরাজিতা প্রতিবেদক