ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

হুইল চেয়ারের  বন্ধী আলী হাসানের জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১১:৫১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হুইল চেয়ারের  বন্ধী আলী হাসানের জীবন

ছবি: জনকণ্ঠ

আলী হাসান, চব্বিশ বছর বয়সী এক দুরন্ত যুবক। পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় কারণে প্রাইমারির গন্ডি পাড় না করেই বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত হন।

বাবা ও ছেলের আয় দিয়েও যখন ঠিক ভাবে সংসার চলছিলনা, তখন আলী হাসান ঠিক করেন ঢাকায় গিয়ে কাজ করবেন। সেই অনুযায়ি  তিনি ঢাকায় চলে যান। 

কিন্তু ভাগ্য  তার সহায় হয়নি। কর্মস্থানে দেড় বছর আগে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিজেই হয়েছেন এবার সংসারের বোঝা হয়ে যান 

আলী হাসানের বাবার নাম খালেক রাঢ়ী। পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের নিমদী গ্রামে বাড়ি। মা, বাবা, স্ত্রী ও দেঁড় বছর বয়সী আবু বকর সিদ্দিক নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে তার। 

কর্মস্থান ঢাকার তাঁতী বাজার মোড় এলাকায় ‘তুষার কাটিং’ নামে এক প্লেইন সীট কাটিংয়ের দোকানে চাকুরীর বেতন ১২ হাজার টাকার সঙ্গে বাবার আয় মিলিয়ে বেশ ভালভাবেই চলছিল গ্রামের সংসার। কিন্তু বিধি বাম। কর্মস্থলে কাজের ব্যাস্ততার মাঝে হঠাৎ করে প্লেইন সীটের লট ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত হন আলী হাসান। পৌঁছে যায় জীবন-মৃত্যুর এক সন্ধিক্ষনে।  
এরপর পঙ্গু হাসপাতালে একাধিক অস্ত্রোপচার ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় জীবনে বেঁচে গেলেও দুই পায়ের টিবিয়া হাড় ভেঙে যাওয়ায় গ্যাপ নন ইউনিয়ন ফ্রাকচারের কারণে ইলিজারভ পদ্ধতির চিকিৎসা দেয় হয় তাক।

দুর্ঘটনার দেঁড় বছর অতিবাহিতেও ইলিজারভ পদ্ধতির চিকিৎসায় দেয়া স্টিলের বেড়ি পায়ে পড়ে হুইল চেয়ারেই বন্ধি হয়ে আছে আলী হাসানের স্বাভাবিক জীবন। জরুরী প্রয়োজনে চলাচল, গোসল, খাবার দাবার, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে অপরিহার্য নানা কাজে স্ত্রী ফারজানা, মা ও বৃদ্ধ বাবা খালেক রাঢ়ী তাকে সহায়তা করেন।   

আলী হাসান জানায়, ‘অর্থাভাবে নিয়মিত চেকাপ কিংবা ওষুধপথ্য চলছে না তার। লজ্জায় কারো কাছে সহজে হাত পাততেও পারছেন না। কেউ আবার কোন ধরণের সাহায্য সহোযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিচ্ছেন না। টাকার অভাবে ছোট একটি শিশু সন্তানসহ পরিবারের সবার খাবারই জোটছে না। খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। ওষুধ কিনবেন কিভাবে। প্রায়ই ওষুধ খাওয়া হয় না। দুর্ঘটনাকালিন চিকিৎসায় টাকা-পয়সা খরচ করলেও এখন কোন প্রকার সাহায্য সহোযোগিতায় অপরগতা জানিয়েছেন কর্মস্থান তুষার কাটিংয়ের মালিক পক্ষ। 

এদিকে পায়ের জ্বলাযন্ত্রনা রয়েছে। ঠিকমত ঘুম হয়না তার। 

ঢাকায় গিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার সামর্থটুকুও নেই আলী হাসানের পরিবারের। তবে অর্থের যোগানদিয়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে পায়ে ভর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এমন আশা আলী হাসানের।

আলী হাসানের স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান, নিজের ভরনপোষন কিংবা স্বামীর চিকিৎসায় সহোযোগিতা করার মতো তার বাবার পক্ষেরও কোন সম্বল নেই। দুর্ঘটনার পর থেকে স্বামী সন্তান নিয়ে দুদর্শায় জীবন কাটে তার।

ছেলেআলী হাসান দুই পায়ে ভর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে এমনটি দেখতে চান মা হেলেনা বেগম।

দুর্ঘটনার পর থেকে বিত্তবান কিংবা জনপ্রতিনিধি কেউ এগিয়ে আসেননি। উপরন্তু স্থানীয় মেম্বর চেয়ারম্যানদের নিকট পঙ্গুভাতায় নাম অন্তুর্ভূক্তি কিংবা সাহায্যের জন্য গেলে কেউ গুরুত্ব দেয়নি এ অভিযোগ করেন আলী হাসানের চাচা রেজাউল করিমের ।

ছেলের দুর্ঘটনায় নেমে আসা কষ্টের বর্ননা দিতে চোখের জল গড়িয়ে নামে আলী হাসানের বৃদ্ধ বাবা খালেক রাঢ়ীর। তিনি জানায়, ছেলের জন্য অষুধ আনতে পারেন না টাকার অভাবে। এখন সর্বশান্ত। কোন দিন কারো কাছে হাত না পাতলেও ছেলের চিকিৎসা ও সংসার চালাতে এখন ১০-২০ টাকার জন্যও হাত পাততে হয়। ছেলের দুরাবস্থায় কিংবা নিজের এই বৃদ্ধ বয়সেও সরকারি কোন সাহায্য সহোযোগিতা পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নদী ভাঙ্গলী এলাকার লোক। ডেড়াঘরটুকু ছাড়া জায়গা জমি কিছুই নেই। নদীতে জাল ফেলে যদি কিছু মিলে তো ভাল; অন্যথায় না খেয়ে উপোষ থাকতে হয়।’ সমাজের বিত্তবান কিংবা সরকারি সহোযোগিতায় আল্লাহর রহমতে ছেলে আলী হাসান সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে আশা তার।’

শিহাব

×