ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অটিজম ফাউন্ডেশন: ২০ বছর পূর্তি উৎসব পালন

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৬:২১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অটিজম ফাউন্ডেশন: ২০ বছর পূর্তি উৎসব পালন

ছবি: জনকণ্ঠ

আজ শনিবার (১লা ফেব্রুয়ারি) অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন পরিচালিত বিশেষায়িত স্কুল কাননের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাননের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ও মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো রাজধানীর কেরানীগঞ্জের বসিলায় অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ক্যাম্পাসে। অনুষ্ঠানে একক সংগীত, দলীয় সংগীত, মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য, নৃত্যনাট্য এবং ফ্যাশনশোসহ ছিলো নানা বিনোদনমূলক ইভেন্ট।

অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (এডব্লিউএফ)- এর ভাইস চেয়ারম্যান আনিকা তাবাসসুম দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল থেকে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। এটি একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। আমরা অটিজম আক্রান্ত শিশুদের এডুকেশন এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করি।

আনিকা তাবাসসুম বলেন,  আমরা জানি যে, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সামাজিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে আছে, অনেকের আবার আচরণগত সমস্যা রয়েছে। আমরা তাদের বিভিন্ন ধরনের থেরাপি দিয়ে থাকি। যেমন- অকুপেশনাল থেরাপি, স্পীচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি, ফিজিও থেরাপি এন্ড বিহেভিয়ারাল থেরাপি। এই থেরাপির মাধ্যমেই তাদের যে নানা লিমিটেশন্স আছে, সমস্যা আছে সেটা আমরা কিছুটা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হই। পাশাপাশি আমরা তাদের একস্ট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির উপর অনেক জোর দেই। যেমন- তাদের নাচ, সংগীত, আর্ট এবং স্পোর্টসের ক্লাস আছে।

তিনি বলেন, ওদের একটা আলাদা ভোকেশনাল ক্লাসরুম আছে যেখানে যেসব স্কিলস্ আমাদের ইন্ডিপেন্ডেন্ট হতে শিখায় সেসব শিক্ষা দেয়া হয়। যেমন- কারিগরি শিক্ষা, সেলাই, কম্পিউটার শিক্ষা প্রভৃতি তাদের শেখানো হয়। আবার ওদের মধ্যে এমন কিছু বাচ্চা আছে যাদের ট্যালেন্ট এবং স্কিলস অনেক বেশি। তাদেরকে আমাদের সরকারি যে এনসিটিবি সিলেবাস আছে ওইটার উপর জোর দিয়ে আমরা ওদেরকে ক্লাস ওয়ান থেকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করাই। 

তিনি আরও বলেন, অনেক বাচ্চা আমাদের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করেছে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে কী আমরা জানি এই বাচ্চাদের অনেক লিমিটেশনস আছে, ওরা বাকিদের মতো না এবং ওরা কিছুই পারে না ব্যাপারটা আসলে মোটেও তেমন না। বিগত ২০ বছরে আমরা দেখেছি তাদের স্কিল এতোই বেশি যে তাদের একটু সময় আর একটু কেয়ারটা লাগে। ওরা কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক পুরস্কার পেয়েছে। আবর সরকারী এবং বেসরকারী যতগুলো প্রতিযোগিতা হয়- আর্ট কম্পিটিশন হোক বা কালচারাল কম্পিটিশন হোক ওরা কিন্তু ওগুলোতেও পুরস্কার পেয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যগুরু শামীম আরা নীপা বলেন,  “সৃষ্টির কোনো দোষ নেই, তারা নিষ্পাপ। দোষ আমাদের। আমরা যদি তাদের পাশে না দাঁড়াই সেটা আমাদের অপরাধ।” 

নীপা বলেন, অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশু-কিশোররা সঠিক পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ পেলে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারে এবং তারাও মেধারভিত্তিতে অবস্থান করে নিতে পারে সমাজের মূলস্রোতে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রানার অটোমোবাইলস পিএলসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, এফসিএ বলেন, আমরা সবাই অটিস্টিক। সহজেই আমরা কোনো কিছু মেনে নিতে পারিনা। আইনস্টাইন, ইলন মাস্কের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ছিল সেটা আমরা খুঁজি না। নজরুল, রবীন্দ্রনাথরা তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে অতুলনীয় অবদান রেখে গেছেন যাদের হয়তো তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকের মধ্যেই জন্মগতভাবে  হিডেন কিছু ট্যালেন্ট আছে। কারও টেলেন্টের সাথে অন্যদের ট্যালেন্টের মিল নাও থাকতে পারে। আর এই হিডেন টেলেন্ট প্রকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া আমাদের দায়িত্ব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও প্রধান উপদেষ্টা ডাঃ রওনাক হাফিজ ও পরিচালনা পরিষদের সন্মানিত চেয়ারপারসন প্রফেসর ডা: শারমিন ইয়াসমিন।

মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানার গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর পরিচালকবৃন্দ, কনফিডেন্স গ্রুপের এর পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও দাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পরিষদের সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ও অধ্যক্ষ কানন ডা: রওনাক হাফিজ, পরিচালনা পরিষদের ভাইস চেয়ারপারসন আনিকা তাবাসসুম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর সাবরিনা ইশরাতসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সমাজের নানা স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এছাড়াও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের নানা স্তরের বিভিন্ন পেশাজীবী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের সফল ব্যক্তিবর্গসহ অনেকে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটির শুভ সুচনা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আবদুল মাজেদ, উপস্থাপনায় ছিলেন শিক্ষার্থী মো. আশরার বিল্লাহ খান রাকিন। মনোজ্ঞ বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয় এই শিক্ষার্থীদের সুনিপুন দক্ষতা। একক সংগীত, দলীয় সংগীত, মনোমুগ্ধকর দলীয় নৃত্য, নৃত্যনাট্য, ফ্যাশনশোসহ নানা বিনোদনমূলক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।

২০তম বর্ষপুর্তির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপারসন ও অত্র অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রফেসর ডাঃ শারমিন ইয়াসমিন এর সমাপনী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মনোজ্ঞা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৫ এর সমাপ্তি হয়।

শিহাব

×