ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বৃহস্পতিবার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গ্রন্থ পাঠ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

একটা ব্যতিক্রমী উৎসব হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। বেগম রোকেয়া এবং তার অনবদ্য রচনা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ ঘিরে এই উৎসব। জাদুঘর আয়োজিত উৎসবে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। তাদের উপস্থিতিতে দিনভর মুখরিত ছিল জাদুঘর প্রাঙ্গণ। দেয়াল পত্রিকা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, সংগীত, নৃত্য, লাঠিখেলাসহ বিচিত্র আয়োজনে সাজানো হয়েছিল উৎসব।

পেছনের গল্পটিও অনেকের মনে থাকার কথা। হ্যাঁ, গত বছরের মে মাসে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ স্বীকৃতি লাভ করে ‘সুলতানা’স ড্রিম’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন।’ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষে ট্রাস্টি মফিদুল হক বহু বছর আগে লেখা বইটির স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে সংস্থাটির এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক কমিটি সম্মানজনক এই স্বীকৃতি প্রদান করে। এর পর থেকে নতুন করে আলোচনায় আসে ‘সুলতানার স্বপ্ন।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, বেগম রোকেয়ার রচনা সংখ্যা অনেক। বেশিরভাগ রচনায় নারী মুক্তির কথা জোর দিয়ে বলেছেন তিনি। নারীর অধিকারের জন্য লড়াই করে যাওয়ার কথা বলেছেন। বলেছেন এ নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। ‘সুলতানা’স ড্রিম’ তেমনই এক স্বপ্ন। ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান  লেডিজ ম্যাগাজিনে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯০৮ সালে প্রকাশিত হয় বই আকারে। প্রথমে ইংরেজিতে লিখেছিলেন। পরে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ শিরোনামে বাংলায় বইটি প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে।

বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে ধ্রুপদী নারীবাদী কল্পকাহিনীর আদিতম উদাহরণ হিসেবে দেখা হয় বইটিকে। সমাজ তখন সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রতিকূলে। আরেক শিকলের নাম ধর্ম। এই সব বাধার বিপরীতে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে লিখে গেছেন তিনি। আলোচ্য বইটিতে এক নারীবাদী স্বপ্নরাজ্য নারীস্থানের বর্ণনা দিয়েছেন লেখিকা। বহুবিধ বিচার বিশ্লেষণ ও ভোটাভুটি শেষে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় প্রাচীন প্রকাশনাটিকে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এই অর্জনের মূল স্পিরিট  ধারণ করে নতুন আরও কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করে। ‘সুলতানাস ড্রিমস আনবাউন্ড’ কর্মসূচীর আওতায় কিছুদিন আগে হিমালয় অভিযানে গিয়েছিলেন পাঁচ নারী।   এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার দলটির নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে পথ হাঁটেন ইয়াসমিন লিসা, তহুরা সুলতানা রেখা, এপি তালুকদার ও অর্পিতা  দেবনাথ। প্রায় একই সময় সুলতানার স্বপ্ন পাঠ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের মোট ২৮টি পাঠাগারের মাধ্যমে পরিচালিত হয় কর্মসূচি।

গত ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বই পড়ে লিখিত প্রতিক্রিয়াও জানান পাঠক। বিভাগ ছিল তিনটি। তিন বিভাগের লেখা থেকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত লেখাগুলো জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। জাদুঘর সেখান থেকে চূড়ান্ত বিজয়ীদের নির্বাচন করে। উৎসবে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এ সময় জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ডা. সারওয়ার আলীসহ বাংলাদেশে ইউনেস্কো প্রতিনিধি ও অফিস প্রধান ড. সুজান ভেইজ উপস্থিত ছিলেন।

নিশাত মজুমদারসহ বাকি চার নারী পর্বতারোহীও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। বক্তরা বেগম রোকেয়ার অনুপ্রেরণায় নারীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং নৃত্যায়োজনের মাধ্যমেও এই প্রত্যয় জানানো হয়। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে এদিন সত্যি তিল ধারণের জায়গা ছিল না। জাদুঘরের বাইরের অংশে এদিন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেয়ালপত্রিকা প্রদর্শন করে।

হিমালয় পর্বতারোহনের রোমাঞ্চকর আলোকচিত্র বিস্ময় নিয়ে দেখে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা। খোলা মঞ্চে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। লোকগান লাঠিখেলাসহ বর্নিল আয়োজন উপভোগ করে শিক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে অন্য রকম এক উৎসব। এমন জাগরণী উৎসবের জন্য ধন্যবাদ পেতেই পারে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

×