ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

জয়িতাদের নজরকাড়া পণ্য

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

জয়িতাদের নজরকাড়া পণ্য

২০১১ সালে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ নামে যে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মহা প্রকল্প সেটা ছিল সমসংখ্যক নারীর জন্য অভাবনীয় অর্জন। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে গত শতকের আশির দশকে। কর্ম জগতে নারীর অভিগমন সমসাময়িক অবস্থার চমৎকার অভিযোজন। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারীদের এগিয়ে চলা দৃশ্যমান হতে বর্তমান শতকের এক দশক পার করে দেওয়া উদ্যোক্তা তৈরিতে ধীরগতির অবস্থা বলাই যায়। উচ্চ শিক্ষিত নারীরা মূলত শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের পেশায় বলয়কে অবারিত আর নিরবচ্ছিন্ন করে বৃহত্তর কর্মজগতে প্রবেশ সেটা সময়ের ন্যায্যতা। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয় উন্নত প্রযুক্তির নবআঙ্গিক ও নারী সমাজকে বৃহত্তর কর্ম জগতের অনুগামী করতে নানামাত্রিক সুযোগ-সুবিধা ও হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে। তাই চলমান শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে নারী উদ্যোক্তা ও তাদের অনেকটাই ব্যতিক্রম পেশাকে আর্থিক কর্মযোগের অনুষঙ্গ করেছে। সত্যিই বাংলাদেশে নারী সমাজের জন্য এক অনন্য জগতের দ্বার খুলে যাওয়া। সামান্য পুঁজি কিংবা ক্ষুদ্র ঋণে খাদ্য পণ্যের পসরা সাজিয়ে যে নবতর আঙ্গিক জয়িতাদের তা নতুন ও বদলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এক অবারিত কর্মযোগ। ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকে শুরু করে বৃহত্তর সামাজিক বলয়ে নারী উদ্যোক্তার দৃষ্টিনন্দন এগিয়ে চলা যুগ ও সময়ের অপরিহার্যতা। এই মুহূর্তে সারাদেশের অভাবনীয় এক পণ্য সম্ভারে সাজানো-গোছানো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার যে আয়োজন, কর্মযোগ জাতির অর্থনীতির অনন্য যোগসাজশই নয় বরং দেশীয় পণ্যের নানামাত্রিক দৃশ্যমান তাও এক অপরিহার্য বাণিজ্যিক কর্মযোগ।
যেখানে সমসংখ্যক নারীর ব্যবসা-বাণিজ্যে তাদের কর্মদ্যোতনা মেলার শ্রীবৃদ্ধিই নয় বরং হারিয়ে যাওয়া কিছু ঐতিহ্যিক সম্ভার পুনরুজ্জীবিত করাও নতুন সময়কে সামাজিক জীবনের অনুবর্তী করা। এমন সব গৃহকর্মের নৈমিত্তিক উপাদান আপ্লুত করার মতো। আবার পুরনো আমলের মাটির হাঁড়ি পাতিল ও নজরকাড়া সৌন্দর্যে মেলাকে যেন অনন্য মাত্রায় উপভোগ করায়।
বাংলাদেশ এখনো গ্রামনির্ভর পল্লী জননীর এক অবারিত সম্ভারে আলোকিত বলয়। সিংহভাগ মানুষই শস্য-শ্যামল গ্রামবাংলার নির্মল পরিবেশে যাপিত জীবনকে সার্থক আর পূর্ণ করে তোলে। সেখানে যেমন সমসংখ্যক নারীর কর্মযোগে সোনার ফসল ফলে আবার গ্রামীণ ঐতিহ্যের হারিয়ে যাওয়া অনেক পণ্যও সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ায়। প্রতিবারের মতো এবারের বাণিজ্যমেলা ও নারী উদ্যোক্তার কর্মদ্যোতনায় সিক্ত। পাশাপাশি আগ্রহী গ্রাহক, ক্রেতা আর দর্শনার্থীর কাতারেও নারীদের সংখ্যা দৃষ্টিনন্দন। সেখানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের জয়িতা ফাউন্ডেশনের নারী উদ্যোক্তা ও নিজেদের কাজের জায়গাকে পরিশীলিত, উপভোগ্য আর আকর্ষণীয় করতে উদ্দীপ্ত চেতনায় দর্শনার্থীর নজর কাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা মানেই দেশী-বিদেশী পণ্যই নয় ক্রেতার কাতারও এক অভাবনীয় সম্মিলন। তবে বিদেশী পণ্যের চাকচিক্য ক্রেতার আগ্রহ যেমন বাড়াচ্ছে একইভাবে স্বদেশী ঐতিহ্যিক পণ্যও চিরায়ত বাংলার শোভাবর্ধনে প্রাসঙ্গিক অবদান রাখছে। তবে আমাদের তৈরি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যিক সম্পদের চাহিদাও বিশ^ বাজারে অনলাইননির্ভর পণ্য বেচাকেনা আজ সময়ের অপরিহার্যতা। তবে যেহেতু গ্রামীণ চিরায়ত পণ্য নারীদের নিজ হাতে তৈরি অনন্য বুনন ও কারুশিল্পের পরম মাহাত্ম্য। তবে গ্রামীণ নারীরা প্রযুক্তির আঙিনায় অনেকটা পেছানো। তেমন তথ্য গণমাধ্যমের খবর হয়েছে।
সবচেয়ে আনন্দের বিষয় মেলায় যিনি শোরুমে পণ্য ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন তিনিও একজন নারী। সব নারী স্টলে এমন দৃশ্য আকর্ষণীয় ও চমকপ্রদ। আবার বাণিজ্যমেলায় দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড়ও নারীদের শোরুমে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড়ে স্টলগুলো যেন জমজমাট। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে উঠে আসছে নারীদের তৈরি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শিশু-কিশোরদের উপযোগী পোশাক সবই থরে থরে সাজানো-গোছানো। আগ্রহী ক্রেতাকে খুব বেশি সময় নিতে হয় না পছন্দের পণ্য বাছাই করতে। আবার নিজ হাতে পোশাক তৈরিতে সক্ষম নারী উদ্যোক্তাদের নিজস্ব কারখানা রয়েছে। তাদের ঐতিহ্যিক ও বাণিজ্যিক পসরাকে আকর্ষণীয় আর মানসম্মতভাবে বুনন ও কারুশিল্পের চিরায়ত ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখাও নারীদের হরেক কর্মকৌশল। দেশের সোনালি আঁশ পাটের তৈরি পণ্যসামগ্রী ক্রেতাদের নজর কাড়াই শুধু নয় উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেল বন্ধনে পণ্যের যে অবিমিশ্র নান্দনিকতা সেটাও ক্রেতাদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ তো বটেই। আরও আছে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী সিল্কের নবদ্যোতনা। আর ঢাকাই জামদানির কদর তো চিরস্থায়ী এক বৈভব। যা সময়ের আবেদনে আরও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্যিই রাজশাহী সিল্ক আর ঢাকাই জামদানি সঙ্গে মিহি সুতার পাতলা মসলিন শাড়ি যেন যুগ-যুগান্তরের বরমাল্যে আধুনিকতাকেও সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছে। চিরায়ত সৌন্দর্যবর্ধনই নয় নান্দনিকতার অভাবনীয় কারুকার্যে বয়ন শিল্পের যে শাশ^ত বৈভব তা সেকাল এককালকে এক সূত্রে বেঁধে রাখছে। অনেক বড় প্রাপ্তি। আর প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা সর্ব বাঙালির সামনে উপস্থাপন করে দেশী-বিদেশী ক্রেতাকে আপ্লুত করাই নয় বরং বস্ত্রশিল্পে অনন্য সমৃদ্ধ অঞ্চল বাংলা ও বাঙালিকে চিরস্থায়ী মর্যাদার আসনে বসিয়ে দেওয়াও। তাই বাণিজ্যমেলার নারী স্টলগুলো শুধু জয়িতা ফাউন্ডেশন নয় আবহমান কালের বস্ত্র সম্পদেরও নবদ্যুতির কিরণ। 

×