ছবি : সংগৃহীত
জাপানের সমাজে এক অদ্ভুত পরিসংখ্যান সামনে এসেছে, যা অনেককেই অবাক করেছে। বেশ কিছু বয়স্ক জাপানি নাগরিক তাদের জীবনের শেষ সময়টা জেলে কাটাতে চান। তাদের মতে, কারাগারে থাকা মানে শান্তি, নিরাপত্তা এবং নিঃসঙ্গতার অবসান। তবে, প্রশ্ন উঠছে—তাদের জীবনের এই শেষ সময়টা কেন তারা কারাগারে কাটাতে চান, যেখানে তাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী?
কারাগারের কর্মকর্তা ও রক্ষীরা জানান, অনেকেই বাইরে একাকীত্বের কারণে এতটাই কষ্ট পান যে, তারা কারাগারে থাকতে চাইছেন।
টোকিওর উত্তরে তোচিগি নারী কারাগারের কর্মকর্তা তাকায়োশি শিরানাগা সিএনএনকে জানিয়েছেন, কিছু বন্দি এমনও আছেন যারা প্রতি মাসে ২০,০০০ বা ৩০,০০০ ইয়েন (১৩০-১৯০ ডলার) দিয়ে এই কারাগারে চিরকাল থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেন!
সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে ৮১ বছর বয়সী আকিয়ো, যিনি দোকানে খাবার চুরি করার জন্য কারাগারে এসেছিলেন। ছোট ধূসর চুল এবং হাতে বয়সের ছাপ থাকা আকিয়ো জানান, "এই কারাগারে আমি ভালো মানুষদের সঙ্গে থাকতে পারি। এখানে শান্তি আছে এবং সম্ভবত এটি আমার জন্য সবচেয়ে স্থিতিশীল জায়গা।"
কারাগারের পিছনের অংশে বন্দি নারীরা থাকেন। তাদের বেশিরভাগই কারাগারের উৎপাদন কারখানায় কাজ করেন, তবে কিছু বন্দি কর্মহীনও থাকেন। এখানে বন্দিরা নিয়মিত খাবার, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং বয়স্কদের যত্ন পেয়ে থাকেন। কিন্তু বাইরে তাদের সঙ্গে থাকার কেউ নেই, একাকীত্ব তাদের জন্য অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিরানাগা আরও জানান, অনেক বন্দি কারাগারে আসেন শীতের কারণে বা ক্ষুধার কারণে। যারা অসুস্থ হয়ে পড়েন, তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারেন। কিন্তু একবার তারা মুক্ত হলে তাদের নিজস্ব খরচে চিকিৎসা নিতে হবে। তাই কিছু মানুষ যত দিন সম্ভব কারাগারে থাকতে চান, কারণ এখানে তারা যত্ন এবং চিকিৎসা পাচ্ছেন। অনেকের মতে, কারাগার আসলে একটি নার্সিং হোমের মতো হয়ে গেছে।
জাপানে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন, এবং তাদের মধ্যে অনেকেই চুরির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৮০ শতাংশের বেশি বয়স্ক নারী বন্দি চুরির দায়ে কারাগারে ছিলেন।
এই প্রবণতা পুরুষদের মধ্যেও দেখা যায়। তবে, সরকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বয়স্ক বন্দিদের জন্য নানা প্রোগ্রাম চালু করেছে। এসব প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন জীবনযাপন, মাদক আসক্তি থেকে মুক্তি এবং পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া, সরকার এখন প্রবীণদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসন সুবিধা উন্নত করার বিষয়ে কাজ করছে।
এতসব অবস্থা বিবেচনা করে, এটি স্পষ্ট যে, জাপানে কিছু বয়স্ক নাগরিকের জন্য কারাগার আসলে নিরাপত্তা, শান্তি এবং একাকীত্বের অবসান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নুসরাত