রহস্যময় এক পাখি আবাবিল। পবিত্র কাবা ঘর ভাঙতে এসে যে পাখির কাছে পরাজিত হয়েছিল আবরাহার হস্তি বাহিনী। একসময় অনেকের ধারণা ছিল শীতকাল এলে এই পাখি চাঁদে চলে যায়। ঘুমিয়ে থাকে পানির তলায়।
একসময় পশ্চিমাদের ধারণা ছিল শীতকালে আবাবিল পাখি চাঁদে যায়। অনেকে ভাবত শীত এলে তারা নদীর তলদেশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবাবিল নিয়ে গ্রিক এমনকি রোমান পুরো কথায়, পুরাণে, কথাতেও বহু কাহিনী পাওয়া যায়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দ মক্কার পার্শ্ববর্তী ইয়েমেনের শাসক আবরাহা রাজধানী সানা তে কাবার অনুরূপ ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ করেন। তার ইচ্ছা ছিল মক্কার পরিবর্তে সানা ঘিরে আবর্তিত হবে বিশ্ববাসীর প্রার্থনা। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মানুষ কাবা ত্যাগের কথা কোনোভাবেই ভাবতে পারেন না। ক্ষুব্ধ আবরাহা তাই কাবা গুঁড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বড় বড় হাতি নিয়ে কাবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে তার সৈন্যদল। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে হাতিগুলো আর অগ্রসর হতে চায় না। চতুর আবরাহা এবার হাতিগুলোকে খাবারের লোভ দেখায়।
খাবার দেখে সেগুলো আবারো আগাতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেনারা থামতে বাধ্য হয়। তাদের উপর বৃষ্টির মতো নুড়ি পাথরের ডিল এসে পড়তে থাকে। দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিতে আকাশ ছেয়ে গেছে। তাঁরাই ছুড়ছে এসব ডিল। এভাবেই বৃহদাকার প্রাণীর পথ আটকে দেয় আকারে ক্ষুদ্র পাখি। পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে আবাবিল পাখির কথা। গ্রিক রোমান পুরাণে কথাতেও বহু কাহিনী পাওয়া যায়।
ইংরেজি নাম সোয়ালো। ইউরোপে পাখিটি বার্ন সোয়ালো বা গোলাঘরের পাখি হিসেবেও পরিচিত। আবাবিল এর অনেক প্রজাতিই গাছের কোটর, গোলাঘর, আস্তাবল ইত্যাদি জায়গায় বাসা বাঁধে। সাধারণভাবে জলাভূমির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। ইউরোপ ও আমেরিকায় এরা পরিযায়ী। শীত পড়লে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে উষ্ণ অঞ্চলে আসে। পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উষ্ণ অঞ্চলের আবাবিল এরা জন্মস্থানে জীবন কাটিয়ে দেয়।
বসন্তের আগমনের প্রতীক হিসেবে দেখতো পশ্চিমারা। পাখিটির আচরণ দেখে, আবহাওয়া কেমন যাবে তা নির্ধারণ হতো পাখিটির মাটির কাছাকাছি ওড়ার অর্থ বৃষ্টি হবে। তারা উঁচুতে উড়ছে মানে আবহাওয়া ভালো। অবশ্য বিষয়টি স্রেফ প্রচলিত বিশ্বাস নয়। নিম্নচাপ প্রায়ই খারাপ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। অন্যদিকে সেসব পাখিদের জন্য উড়তেও কঠিন হয়ে পড়ে। এককালে ধারণা করা হতো, আবাবিল পাখি মৃতদের আত্মা বহন করে। আর তাই ছেলে হারানো শোকার্ত মায়েরা পাখিটিকে পবিত্র বলে মনে করত। দূরের যাত্রায় নাবিকদের জন্যও সৌভাগ্যের প্রতীক ছিল আবাবিল। অনেক যোদ্ধা শক্তি ও দ্রুততার চিহ্ন হিসেবে হাতের আঙুলে সোয়ালোর ট্যাটুও করাতেন। ১৬৮০ সালের দিকে ইংরেজ শিক্ষাবিদ চার্লস মার্টন দাবি করেন, শীতকালে আবাবিল পাখি চাঁদে যায়। শীতকালে তাদের দেখা যায় না তা সকলেই জানত। কিন্তু সে সময়ে তারা কোথায় যায় এ বিষয়ে কোনো ধারণা ছিলনা।
মাটন পাখিদের অনেক অনুসন্ধান করেও খোঁজ না পেয়ে এ তথ্য দেন। মাটনের ঘটনার প্রায় সত্তর বছর আগেই গ্যালিলিও চাঁদে পাহাড় ও সমুদ্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করেন। সম্ভবত তিনি ফ্রান্সিস গডউইন ১৬৩৮ সালে প্রকাশিত দ্য ম্যান ইন দ্য মুন উপন্যাসও পড়েছিলেন। উপন্যাসটিতে চাঁদে গিয়ে এক ব্যক্তি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দেখা পান। জল ভালোবাসে বলেই নদী ও হ্রদ ঘিরেও আবার বিলকে নিয়ে বিভিন্ন গল্প আছে। লোককথায় আছে আবাবিল পাখি হ্রদে রাত কাটায়। অনেকে নদীর তলদেশ থেকে পাখিকে উড়তে দেখেছেন বলেও দাবিও করেন। উনিশ শতকে এসে অবশেষে আবাবিল এর রহস্য উন্মোচিত হয়। ভারতে ব্রিটিশদের শাসন জোরদার হতে শুরু করে। ফলে ওই অঞ্চলে অতিথি পাখি হিসেবে আসা আবাবিল দের দেখে তাদের পরিযায়ী আচরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হন পাখি বিশারদরা।
ফুয়াদ