ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু ভ্রমণ

মাজহারুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত: ১৯:০১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু ভ্রমণ

ভৌগোলিক সীমানা অনুসারে, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের বিন্দু হলো ছেঁড়া দ্বীপ। এরপর বঙ্গোপসাগরের বুকে বাংলাদেশের আর কোনো স্থলভাগের সীমান্ত নেই। অবস্থান অনুসারে টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত প্রাকৃতিক সম্পদ, পাথুরে, নীল পানি এবং প্রবালে পরিপূর্ণ দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। সেই সেন্ট মার্টিন থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হলো ছেঁড়া দ্বীপ। যদিও বর্তমানে ছেঁড়া দ্বীপ সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ভ্রমণে। তবুও থেমে থাকে না হাজারো ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমণ। প্রতিনিয়ত ছুটে চলে অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু ছেঁড়া দ্বীপের সুপ্ত রহস্যের খোঁজে। ছেঁড়া দ্বীপের চারপাশে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশিতে পরিপূর্ণ। আরও রয়েছে অসংখ্য প্রবাল এবং সামুদ্রিক ঝিনুক। তীরে জমে থাকা ঝিনুকগুলো রোদের আলোতে ঝিকিমিকি করতে থাকে। যদিও দ্বীপটিতে মানুষের বসবাস নেই। মানুষ ছাড়াই এই দ্বীপের সৌন্দর্য অনেক বেশি। সুনসান-নিরিবিলি, চারপাশে সাগরের নীল পানি, দূরের নীল পানিতে ডলফিনের খেলা, সামুদ্রিক ঝিনুক সবমিলিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি দিয়ে রয়েছে। তবে বলাবাহুল্য, কিছু সংখ্যক ভ্রমণকারী ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কিছু প্রবাল এবং ঝিনুক নিয়ে আসে। যার ফলে ছেঁড়া দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে দিন দিন। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গেলেই ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ করার রহস্য সবার মধ্যে জেগে ওঠে। কিন্তু সরকারি নিষেধাজ্ঞার জন্য ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণটা এখন সবাই করতে পারে না। তারপরও কিছু সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসু ভোরবেলায় চলে যায় ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণে। জোয়ারের সময় এই দ্বীপটি এক-তৃতীয়াংশ নীল পানিতে ডুবে যায়। বাকি এক অংশে সারাক্ষণ প্রবাল এবং পাথরের সঙ্গে সাগরের নীল পানির খেলা চলে। সাগরের উঁচু উঁচু ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে এই পাথরে। পানি আছড়ে পড়ার শব্দে যে কোনো ভ্রমণ পিয়াসুকে মুগ্ধ করবে। ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার পথে দেখা মিলবে সমুদ্রের তীরে সারি সারি শুঁটকি শুকানোর দৃশ্য। ছেঁড়া দ্বীপে সকালের সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখলে মনে হবে নীল জলরাশি আর সূর্য একসঙ্গে উদিত হচ্ছে। আবার বিকেলের দৃশ্য দেখলে মনে হবে সমুদ্রের নীল জলরাশিতে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলরাশি আর সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখার জন্য ছেঁড়া দ্বীপের বিকল্প কোনো স্থান হতে পারে না। পাশাপাশি ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজসমূহও সরাসরি দেখা যায়। সাগরের নীল পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা কোস্ট গার্ডের এসব জাহাজ সারাক্ষণ দ্বীপটির পাহারায় সতর্ক অবস্থানে থাকে। ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার সময়ে সারি সারি নারিকেল গাছ চোখে পড়বে। যা কিনা সেন্ট মার্টিন এবং ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ধনে এক অপরূপ উপাদান। সৌন্দর্য বিমোহিতকর এমন দৃশ্যের টানে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো ভ্রমণকারীরা। সেন্ট মার্টিন থেকে সাইকেল বা ভ্যান গাড়ি যোগে যাওয়া যায় ছেঁড়া দ্বীপে। তবে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে ভ্রমণকারীরা অনেকে ভুলে যায় যে, সে সর্বশেষ ভ্রমণকারী নয়। তারপরে আরও ভ্রমণকারী এখানে আসবে। তাদের জন্যও জায়গাটা দূষণমুক্ত রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সবাই গণহারে ছেঁড়া দ্বীপের পরিবেশ দূষণের ফলে এই দ্বীপটি এখন হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।

×